দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একের পর এক নির্যাতন চালানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর কিন্তু এর কোন প্রতিকার হচ্ছে না। সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পর থেকে গত ক’দিন ধরে মিছিল-মিটিং চলছে। কিন্তু বাস্তবে কোন ফল হচ্ছে না।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন থেকেই সংখ্যালঘুদের উপর কতিপয় ব্যক্তিরা একের পর এক হামলা চালাচ্ছে। অথচ সবাই মুখে এর প্রতিবাদ করলেও বাস্তবে কোন ফল হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন কেনো এসব হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা ভেবে পাচ্ছে না ভুক্তভোগিরা।
সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে জয়পুরহাটে। সেখানে বাড়িতে দেওয়া আগুনের লেলিহান শিখায় আতঙ্কিত হয়ে একজনের মৃত্যুও হয়েছে। জামায়াত-শিবির আর বিএনপিকর্মীদের দেওয়া আগুনে একে একে পুড়ছে জয়পুরহাটে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর। জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া সহিংসতা চলছেই। সর্বশেষ জামায়াত-শিবিরের হিংসার বলি হলেন সুজেন চন্দ্র দাস। মঙ্গলবার রাতে সোনাকুল গ্রামে এক পল্লীতে জামায়াত-শিবিরের দেওয়া আগুনে নিজেদের বিশাল খড়ের গাদা পুড়তে দেখে আতঙ্কে মারা গেছেন সুজেন চন্দ্র দাস (৫৮)। ওই রাতেই সদর উপজেলার পূর্ব পারুলিয়া গ্রামে আগুন দেওয়া হয় সুকুমার দাসের বাড়িতে। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয় একই রাতে। অব্যাহতভাবে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
নাটোরের নলডাঙ্গায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি এবং হিন্দু বাড়ির খড়ের গাদা। নলডাঙ্গা উপজেলার ছাতরভাগ গ্রামে দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগ কর্মীর বাড়ি ও সিংড়া উপজেলার দুটি গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮টি খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অপরদিকে এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও নেত্রকোনায় মন্দিরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ত্রিশাল কালীরবাজার এলাকায় একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের কালীরবাজার তিরখি গ্রামের তরফবাড়ী দয়াল মন্দিরে মঙ্গলবার রাতে দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে এসে এ ঘটনা ঘটায়। এলাকাবাসী টের পেয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা সদর ইউনিয়নের বটতলা গ্রামে গত মঙ্গলবার রাতে কালীমন্দিরে দুর্বৃত্তরা কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মন্দিরের তিনটি প্রতিমার মাথার চুল ও প্রতিমা সাজানোর কাপড় পুড়ে যায়। সকালে মন্দির কমিটির সভাপতি অনিল বিশ্বাস মন্দিরের দরজা খুললে ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন।
অপরদিকে মৌলভীবাজারে হামলার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন। মঙ্গলবার রাতে জয়পুরহাটের সোনাকুল গ্রামে নিজের বাড়ির খড়ের গাদায় দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুন দেখেই আতঙ্কে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বৃদ্ধ সুজেন দাস।
নওগাঁর রানীনগরে একই রাতে তুলাবোঝাই একটি গাড়িতে ও ১১টি পরিবারের খড়ের গাদায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা রাতের বেলায় কুবড়াতলি এলাকার রেজাউলের তুলার মিলের পাশে রাখা তুলাবোঝাই একটি ভটভটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তুলাবোঝাই ওই ভটভটিটি পুড়ে যায়।
এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এহেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনলে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হবে এবং সহিংসতা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে যা দেশের জন্য কখনই মঙ্গল বয়ে আনবে না।