দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাতীয় পার্টিকে নিয়ে দেশে গত এক মাসে যে রাজনীতি হয়েছে মূলত সেগুলো আপাতত নেই। তবে এরশাদ ও রওশনের মধ্যে ক্ষমতা লড়াইয়ের দ্বন্দ্ব রয়েছে এমনটাই ধারনা করা হচ্ছে।
পার্টির নেতৃত্ব নিয়ে নানা ধরনের গুজব শোনা যাচ্ছে। এমনকি জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব কার হাতে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নাকি তার সহধর্মিণী বিরোধীদলীয় নেতা রওশান এরশাদের হাতে। এসব প্রশ্ন এখন দলের নেতাকর্মীদের মুখের শোনা যাচ্ছে।
দশম সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গত এক মাসের নানা নাটকীয় ঘটনার পর পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজ দলে এখন কোণঠাসা। নিজে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত নিযুক্ত হলেও জাপার সংসদীয় দলের নেতৃত্ব হাতছাড়া হয়ে চলে গেছে স্ত্রী রওশনের কাছে। এমন অবস্থায় তাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়েও চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। যদিও এখন পর্যন্ত রওশনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে মুখ খোলেননি এরশাদ।
সরকার গঠনের পর সিএমএইচ থেকে ফেরার পর এরশাদের বাসায় ভিড় করেন বঞ্চিত নেতারা। আর রওশনের বাসায় যান মন্ত্রী-এমপিরা। তারা কেও এরশাদের বাসায় যাননি। পাশাপাশি বুধবার সকালে জাপার মন্ত্রী-এমপিদের স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার কথা ছিল। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এশাদকে না জানিয়ে সংসদীয় বোর্ড এ সিদ্ধান্ত নেয়।
সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জিএম কাদের ও রুহুল আমীন হাওলাদার এরশাদকে জানিয়ে দেন, ‘এ অবস্থা চলতে থাকলে দল টিকবে না।’ খবর পেয়ে এরশাদ মঙ্গলবার রাতেই রওশনের কাছে বিশেষ দূত পাঠিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে ওইদিনের নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেন রওশন ও তার নেতৃত্বে নির্বাচনে যাওয়া মন্ত্রী-এমপিরা।
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সরকারে যাওয়া পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু, প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ বেশির ভাগ এমপি আছেন রওশনের পক্ষে ।
সংবাদ মাধ্যম সূত্র আরও বলেছে, সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন নিয়েও নাকি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। রওশনপন্থি নেতারা সংরক্ষিত মহিলা আসনে নিজেদের মতো করে মনোনয়ন দিতে সক্রিয়। দশম সংসদের প্রাপ্ত আসন অনুপাতে সংরক্ষিত নারী আসনে জাতীয় পার্টি থেকে ৬ জনকে এমপি করা হবে। জাপার পক্ষ থেকে বিরোধীদলীয় নেতার প্যাডে সিইসির কাছে পাঠানো চিঠিতে রওশন এরশাদ বলেছেন, ‘আমি বর্তমানে বিরোধীদলীয় নেতা। দশম সংসদ নির্বাচনে আমার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। অতএব, জাপার নামে এখন থেকে যেসব চিঠি কমিশন থেকে ইস্যু করা হবে তা যেন আমার নামে করা হয়। এ জন্য কমিশনকে অনুরোধ করা হলো।’ সাধারণত দলের প্রধান বা চেয়ারম্যান অথবা মহাসচিবের কাছে চিঠি পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। তবে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় পার্টির কাছে পাঠানো চিঠিটি রওশনের নামে পাঠানো হয়নি। বৃহস্পতিবার জাপার মহাসচিবের কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় নির্বাচন কমিশন।
আর তাই দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মহিলা আসনে মনোনয়ন নিয়েও এরশাদের সঙ্গে রওশনের মন-কষাকষির সৃষ্টি হয়েছে। আবার সরকারে আরও কয়েকজন মন্ত্রীত্ব দাবিসহ বেশ কিছু বিষয়ে রওশনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যাচ্ছেন এরশাদ এমনটা মনে করছেন জাতীয় পার্টির কিছু নেতারা। তবে যায়ই ঘটুক কয়েক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।