ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে নকল দুধ বানানো হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
একটি সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে জেল-জরিমানা দেওয়া হলেও এ কাজ থেকে তাদের বিরত রাখা যাচ্ছে না। এতে একদিকে প্রকৃত দুধ ব্যবসায়ী, প্রান্তিক খামারি ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল সাবরিন বলেন, “গত এক বছর ধরে এ এলাকায় নকল দুধ বানানো হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মণ নকল দুধ ধ্বংস এবং নকল দুধ বানানোর পাঁচটি চুলা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, বিভিন্ন সময় জরিমানা আদায় করা হয়েছে দুই লাখ টাকারও বেশি। একজনকে তিন মাস ও আরেকজনকে এক বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫/৬টি শীতলীকরণ কেন্দ্র থেকে দুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
শাহজাদপুরের জমিরতা, পোরজনা, পোতাজিইয়া, বিহাংগারোসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে জানা যায়, প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে তুলে নেওয়া হয় ননী। তারপর এ দুধ থেকে ছানা কাটা হয়। সেই ছানার পানিতে রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হয় নকল দুধ।
৩৭ লিটার ছানার পানি ও খাবার পানির সঙ্গে তিন কেজি ননী, ৫০ গ্রাম খাবার সোডা (সোডিয়াম বাই কার্বনেট), কয়েক চামচ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, পরিমাণ মতো ময়দা আর চিনি দিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। পরে তাতে ‘কাটিং অয়েল’ ও ‘এসেন্স’ মিশিয়ে বানানো হয় ৪০ লিটার নকল দুধ। এই ‘দুধ’ সাধারণত ৬ ঘণ্টার বেশি সময় ‘তাজা’ থাকে না। ফলে এতে মেশানো হয় বিষাক্ত ফরমালিন। পরে নামীদামী ডেইরি কোম্পানির স্থানীয় বিক্রয় কেন্দ্র ও সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারজাত করা হয় এ দুধ। অবশ্য দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্র ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কেওই নকল দুধ বানানোর বিষয়টি স্বীকার করেননি।
জামিরতা এলাকার দুধ ব্যবসায়ী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, তিনি বা ঘোষরা নকল দুধ বানানোর সঙ্গে জড়িত নন। বিভিন্ন কোম্পানির স্থানীয় দুগ্ধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের লোকেরা নকল দুধ বানায় বলে দাবি করেন দ্বিজেন্দ্র।
জামিরতায় প্রাণের স্থানীয় এজেন্টের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রকাশ্যে খাবার সোডা, পার-অক্সাইড, প্রোলিভভিটসহ নানা রাসায়নিকের বোতল সাজানো রয়েছে। এই কেন্দ্রের কর্মচারী আব্দুস সামাদ দাবি করেন, এসব রাসায়নিক তারা রেখেছেন দুধে ভেজাল আছে কি-না তা পরীক্ষা করতে, নকল দুধ বানাতে নয়।
একই এলাকায় ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টের দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রেও বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ রাখা দেখা যায়। এখানকার কর্মচারী খবির হোসেন জুনাইদ বলেন, “দুধে চিনি, লবণ, সোডা, ভাতের মাড় বা ময়দা মেশানো আছে কি না- তা পরীক্ষার জন্য এসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।” এ কাজে অভিজ্ঞতা আছে কি না- জানতে চাইলে খবির বলেন, কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার পর তাদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় পোরজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল অভিযোগ করেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান নকল দুধ বানানোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। “লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে ছোট ছোট কারবারীদের জেল-জরিমানা দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে নকলবাজরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে”, বলেন তিনি।
জামিরতা বাজারের ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন (৪২) অভিযোগ করেন, চিহ্নিত কয়েকজন ব্যবসায়ী নকল দুধের কারবার করে অল্প সময়ের মধ্যে কোটিপতি বনে গেছেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পোরোজনা গ্রামের প্রান্তিক গো-খামারী আবুল হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, নকলবাজদের কারণে তারা বিপাকে। আগে ঘোষ বাড়িতে দুধ দিয়ে সপ্তাহ শেষে পাওয়া টাকায় গো-খাদ্য কিনতেন। প্রশাসনের নকল দুধ বিরোধী অভিযানের পর এখন ঘোষরা দুধ নিলেও নিয়মিত টাকা দিচ্ছে না।
সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন নাজিমুদ্দিন খান বলেন, নকল দুধ তৈরির অভিযোগ তারাও পেয়েছেন, এটি জনস্বস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। “ছোট ছোট শিশুরা এ দুধ খাচ্ছে। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি এ বিষ খেলে কিডনি ও লিভার আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে”, বলেন এ চিকিৎসক।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।