দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রভাহিত হচ্ছে।
ফরিদপুর
গত এক সপ্তাহ ধরে ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ভাজনডাঙ্গা ও সাদিপুর এলাকার ফরিদপুর শহর রক্ষাবাঁধে ফাটল দেখা দেয়ায় লোকজনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। রাত থেকে স্থানীয় লোকজন বাঁধ ফাটল রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মধুখালী (ফরিদপুর)
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত কামারখালী ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় হাজার একর ফসলী জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। মধুখালী উপজেলার প্রায় ৫টি গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। ভুক্তভোগী প্রায় শতাধিক পরিবার পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার কুসুমদী, ফুলবাড়িয়া গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের চরগয়েশপুর, গয়েশপুর, ফুলবাড়িয়া, সালামাতপুর , গন্ধখালী ও আড়পাড়া গ্রামের শতাধিক বাড়ি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হঠাৎ করে মধুমতি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের সৃষ্টি হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
শেরপুর
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে অব্যাহত পানিবৃদ্ধি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে শেরপুর জেলার নদসংলগ্ন কামারের চর, চর মুচারিয়া, চর পক্ষীমারী, বলাইর চর ও বেতমারী-ঘুঘড়াকান্দি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। শেরপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য আতিউর রহমান আতিক, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইলিয়াস উদ্দিন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আইরিন ফারজানা বন্যাকবলিত অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
মেলান্দহ (জামালপুর)
জামালপুরের মেলান্দহে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ফসলী জমি, মাঠ-ঘাট পানিতে তালিয়ে গেছে। উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে।
বকশীগঞ্জ (জামালপুর)
বকশীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্থির রয়েছে। মেরুরচর, সাধুরপাড়া, বগারচর ও নীলাক্ষিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। একটি প্রাইমারি স্কুলভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অতিরিক্ত খরা বা তাপদাহের কারণে বন্যাপ্লাবিত অঞ্চলে নানা রোগ-বালাইয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ।
সারিয়াকান্দি (বগুড়া)
২৮ সেপ্টেম্বর চন্দনবাইশায় নতুন করে বাঁধ ভেঙে যমুনার পানি প্রচণ্ডবেগে পি.এন হাইস্কুলের মাঠ ছাপিয়ে চন্দনবাইশা বাজারে প্রবেশ করতে থাকায় বাজারের শতাধিক দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যায়। পানি অব্যাহত বাড়তে থাকায় চন্দনবাইশা, বালুচর, ঘুঘুমারি, রৌহাদহ, কড়িতলাসহ কুতুবপুর, কামালপুর, ভেলাবাড়ি ও ফুলবাড়ি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। চন্দনবাইশা বাজার তলিয়ে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী গ্রোয়েন ও বাঁধের উপর হাট-বাজার বসেছে। নদী ভাঙন ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সেখানে অবস্থান করাও নিরাপদ মনে করছে না লোকজন।
গোপালপুর (টাঙ্গাইল)
যমুনায় ব্যাপক ভাঙ্গনের দরুন তারাকান্দি-ভূঞাপুর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখন মারাত্মক হুমকির সন্মুখীন। এ বাঁধের পিংনা ইউনিয়নের বাশুরিয়া গ্রামে বাঁধ থেকে যমুনা নদী মাত্র ৫০ গজ দূরে অবস্থান করছে। গতকাল শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গনকবলিত বাঁধের ভাটির দশ গ্রামের মানুষের মধ্যে কান্নার রোল পড়েছে।
ভাঙ্গুড়া (পাবনা)
গত কয়েকদিনে পাবনার বড়াল ও গুমানি নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। পাঁচটি ইউনিয়নের ১শ’টি গ্রাম ও ভাঙ্গুড়া পৌরসভার মেন্দা মহল্লা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার প্লাবনে উপজেলার ৩০টি বড়পিটের প্রায় ৯৬ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা)
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি না পেলেও পানিবন্দি মানুষের মাঝে চরম দুর্ভোগ বিরাজ করছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। এছাড়া গো-খাদ্যের সংকট রয়েছে আরো তীব্র। পানিবন্দি এলাকার টিউবওয়েলগুলো ডুবে যাওয়ায় মানুষ নদীর দূষিত পানি পান করছে।