দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে জমির দখল-বেদখল নিত্য বিষয়। কখন কে কাকে কার জমি থেকে উৎখাত করে দিয়ে জমির দখল নিয়ে নিচ্ছে তা বলা যায়না। তবে অপরাধ যেমন আছে তা প্রতিকারে আইনও আছে, শুধু জানা দরকার সঠিক আইনের সাহায্য নেয়ার প্রক্রিয়া।
আপনার বৈধ জমি থেকে কেও যদি আপনাকে উৎখাত করে জমির দখল অবৈধভাবে নিয়ে নেয়, আপনার তখন করণীয় কি? হতাশ হবেন না, আইন আপনাকে আপনার বৈধ জমি ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাকে যা যা করতে হবে তা হচ্ছে দুই ভাবে আপনি আপনার জমি ফিরে পেতে পারেন।
এলাকার মাতব্বর/মুরুব্বীদেরকে জানিয়ে তাদের আপনার জমির বৈধ কাগজ দেখিয়ে দখল ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান করতে পারেন। এক্ষেত্রে মাতব্বর/মুরুব্বীরা আপনাকে এবং অবৈধ দখলদারকে ডেকে বৈঠকের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই যে অবৈধ দখল নেয়, তার প্রভাবের কাছে স্থানীয় বিচার টিকেনা, এক্ষেত্রে যদি বৈঠকের সিদ্ধান্ত আপনার পক্ষে না যায় তবে হতাশ হবেন না। আপনার উপর তারা কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবেনা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত আপনি যদি না মানেন তবে তাদের পরিষ্কার করে বলে দিবেন যে আমি আপনাদের সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারছিনা ফলে আমি আদালতে আইনের শরণাপন্ন হব।
আরও জানুনঃ অনলাইনে চালু হচ্ছে জমির নকশা দেখা, খাজনা জমা ও নামজারির সুবিধা!
আদালতে আপনার জমি ফিরে পেতে আইন আপনাকে যথেষ্ট প্রতিকার দিচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি ফৌজদারী আদালত অথবা
দেওয়ানী আদালত দুই আদালতেই আপনার জমি ফিরে পেতে মামলা করতে পারবেন।
ফৌজদারী আদালতে মামলা করলে আপনি দ্রুত প্রতিকার পাবেন, ফলে প্রথমে এখানেই যাওয়া উচিৎ। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৫ ধারা মতে যদি কোনো ব্যক্তি তার দখলকৃত জমি হতে (মালিকানা থাক বা না থাক) হঠাত্ করে বেদখল হয়ে যায় কিংবা কোনো ব্যক্তি তাকে জোরপূর্বকভাবে বেদখল করে তাহলে জমি হতে বেদখল হওয়ার পর তাকে ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে হবে।
ফৌজদারী আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় বেধে দেয়া আছে আইনে, আপনার জমি বেদখল হয়ার ২ মাসের মাঝেই আপনাকে মামলা করতে হবে অন্যথায় আপনি এই আদালতে মামলা করার এখতিয়ার হারাবেন। ফৌজদারী আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে এলাকার নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্য নিয়োজিত ১ম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করতে হবে।
এবার চলুন জেনে নি কিভাবে দেওয়ানী আদালতে বেদখল হওয়া জমির জন্য মামলা করবেন।
এক্ষেত্রে একটা জিনিস লক্ষণীয় আপনি যদি আপনার জমি বেদখল হয়ার দুই মাসের মাঝে ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে ব্যর্থ হন তবে সেক্ষেত্রে আপনার জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা করার পথ খোলা থাকবে। দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হলে জমি বেদখল হয়ার তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে মামলার রায় পেতে কিছুটা সময় লাগবে।
দেওয়ানী আদালতে বেদখল হওয়া জমির জন্য মামলা করতে হলে আপনাকে আপনার জমির মূল্য হিসেবে দেওয়ানী আদালতের বিভিন্ন র্যাঙ্কের জজ আদালতে যেতে হবে।
যেমনঃ
- বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার সহকারী জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
- বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ২ লাখ ১ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার সিনিয়র সহকারী জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
- বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ৪ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার যুগ্ন জেলা জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
- বেদখল সম্পত্তির মূল্য যদি ৫ লক্ষ ১ টাকা থেকে অসীম পর্যন্ত হয় তাহলে জমিটি যে এলাকায় অবস্থিত সেই এলাকার জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজের নিকট মামলা দায়ের করতে হবে।
এবার স্বাভাবিক ভাবে একটি প্রশ্ন আসে যদি আপনার জমি বেদখল হয়ে যায় এবং আপনি ২ মাস বা ৬ মাসের মাঝেও মামলা করতে পারলেন না কোন কারণে তখন কি করবেন?
হ্যা আইনে এই জন্যও বিধান রাখা হয়েছে, আপনি আপনার জমির দখল হারানোর ৬ মাসের বেশি হলে এবং ১২ বছরের ভেতরে হলে মামলা করতে পারবেন ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ এবং ৪২ ধারা মোতাবেক এখতিয়ার ভুক্ত দেওয়ানী আদালতে।
অতএব, আইন আপনাকে আপনার দখল হারান জমি ফিরে পাওয়ার জন্য সকল সুবিধাই দিচ্ছে। আপনার শুধুমাত্র সঠিক আইনের ধারা এবং প্রক্রিয়া জানা থাকা প্রয়োজন। জমির দখল আজকে হারান-নি তো কি, ভবিষ্যতে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়তেও পারেন। সুতরাং, বিষয় সমূহ জানা থাকলে নিজের এবং অন্য কারর বিপদে এগিয়ে যেতে পারবেন।