দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সমুদ্রের নিচে অনুসন্ধানকারী একদল গবেষক দাবি করছে তারা ১৪৯২ সালে ডুবে যাওয়া ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সান্তা মারিয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুজে পেয়েছেন। তারা বলছেন, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিটি অবস্থা বিবেচনা করে তারা দেখেছেন যে এটি প্রায় নিশ্চিত এটি কলম্বাসের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক জাহাজ।
সিএনএনকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে গবেষক দলের প্রধান ব্যারি ক্লিফফোর্ড বলেন, এই আবিস্কার মানবজাতির ইতিহাসকে নতুনভাবে চিন্তা করতে প্রভাবিত করবে। তিনি বলেন, এটা তার জন্য মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার মতো আবিস্কার। যদি এই দাবিটি সত্য হয়ে থাকে তবে তা এই শতকের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর সমুদ্রের গভীরের প্রত্নতাত্ত্বিক আবিস্কার বলে বিবেচিত হবে। ক্লিফফোর্ড ২০০৩ সাল থেকে এই জাহাজের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কার নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা প্রথম দিকে একটি কামান আবিস্কার করার পর ভেবেছিলেন এটি হবে কলম্বাসের হারিয়ে যাওয়া জাহাজ কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিকরা একে ভুল আবিস্কার বলে অবহিত করেন এবং তাকে এই গবেষণা থামাতে বলেন। ফলে তিনি দুই বছরের জন্য সমুদ্রের এই জায়গাটি নিয়ে আর গবেষণা করেননি। দুইবছর পর তিনি আবিস্কার করেন, তিনি ভুল করেছেন তার আবিষ্কৃত এই কামানটি কলম্বাসের সান্তা মারিয়ার একটি কামান।
এক সপ্তাহ আগে তিনি একদল বিশেষজ্ঞ নিয়ে সাগরের সেই ধ্বংসাবশেষের স্থানটি পরিদর্শন করেন। গবেষক দলটি ধ্বংসাবশেষের স্থানটি পরীক্ষা করেন এবং ছবি তুলেন। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের নিকট এর নমুনা পাঠানো হয় এবং ল্যাবে এর বিভিন্ন অংশ গবেষণা করে প্রায় নিশ্চিত হওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের প্রধান চার্লস বেকার বলেন, ব্যারি সম্ভবত শেষ পর্যন্ত কলম্বাসের জাহাজ আবিস্কার করতে চলেছে। সান্তা মারিয়া সম্পর্কে কলম্বাসের লিখিত দলিলে ঠিক সুনির্দিষ্ট জায়গায় পাওয়া গিয়েছে বর্তমান জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। জাহাজের ধ্বংসাবশেষটি হাইতির উত্তরাঞ্চলের উপকূলের একটি প্রবাল প্রাচীরে আটকে রয়েছে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০-১৫০ ফুট গভীরে। ক্লিফফোর্ড ইতোমধ্যে হাইতির কর্তৃপক্ষের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছেন।
১৪৯২ সালে রাণী ইসাবেলা এবং রাজা ফার্দিনান্দের স্পন্সর নিয়ে অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস সান্তা মারিয়া জাহাজ নিয়ে স্পেন থেকে যাত্রা শুরু করেন। কলম্বাসের এই যাত্রার উদ্দেশ্য ছিল ভারত এবং চীনের যাওয়ার জন্য একটি সহজ সামুদ্রিক পথ খুজে বের করা এবং ভারত থেকে অনেক স্বর্ণ নিয়ে আসা। কিন্তু নাবিক তার যাত্রা পথে ভুল করে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চলে যায়। অক্টোবর ১৪৯২ সালে কলম্বাস পা রাখেন ক্যারিবিয়ান দ্বীপ হিস্পানিওলাতে এর অবস্থান বর্তমান হাইতি এবং ডোমিনিকান এর মাঝামাঝি একটি স্থানে। কলম্বাস হাইতিতে একটি বন্দর স্থাপন করেন। সেই বছরের ডিসেম্বর মাসে দুর্ঘটনা বসত কলম্বাসের সান্তা মারিয়া জাহাজটি পাথরের গায়ে আঘাতে ডুবে যায়। কলম্বাস স্পেন ফিরে আসে এবং আরো দুটি অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তার এই তিনবারের অভিযানে তিনি ভারত কিংবা চীন আবিস্কার করতে সমর্থ হননি।
হাইতির সরকার ব্যারি ক্লিফফোর্ডের এই আবিস্কারের খননকার্যে সহায়তা করছেন। ব্যারির এই দলটি বেশ কিছু স্পর্শকাতর যন্ত্র তারমধ্যে রয়েছে মেটাল ডিটেক্টর এবং সোনার স্ক্যানার দিয়ে ধ্বংসাবশেষের গবেষণা কাজটি পরিচালনা করছেন।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন