দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিজ্ঞানীরা এই প্রথমবারের মতো ভালোভাবে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন যে, একটি মমির বয়স কত, তারা কি খেত, সেটি কি ধরনের রোগে ভুগছিল এবং কিভাবে এটি মারা গেল। মমির এই প্রশ্নগুলোর জবাব পাওয়া গিয়েছে কম্পিউটারাইজড সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে।
গবেষকরা এই মমিটির স্তরীভূত স্তরের মাধ্যমে মমির ভেতরের থ্রিডি ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। সিটি স্ক্যানের পর ব্রিটিশ মিউজিয়ামের কর্তৃপক্ষ দেখতে পান যে, এর ভেতরে একজন মানুষ রয়েছেন। মানুষটিকে ভেতরে আরো কিছু ব্যান্ডেজের মাধ্যমে সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। ফলে এই মমিটির ভেতরে কয়েকটি স্তরের প্রলেপ রয়েছে। তাই গবেষকরা চিন্তা করেন একে পুরোপুরি না খুলে এর ভেতরের অবস্থা বোঝার কোন পদ্ধতি রয়েছে কিনা। কেননা একে উন্মোচিত করতে গেলে অনেকটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জন টেলর হলেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামের প্রাচীন মিশর এবং সুদান অংশের একজন কিউরেটর। তিনি এই গবেষণার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। তিনি বলেন, তিনি এই মমিটির থ্রিডি স্ক্যানিং করার পর এর ছবিগুলো দেখে অবাক হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, আমি যখন ডার্ক রুমে এই ছবিগুলো নিয়ে কাজ করছিলাম তখন দেখে পুরো অবাক হয়ে গিয়েছি যে এই মমিগুলোর জীবনযাত্রা কেমন ছিল। গবেষকরা এই মমিগুলোর পেশির অংশ এবং ধমনী-শিরা দেখতে সক্ষম হয়েছেন। তারা দেখতে পান এই মমিগুলো পায়ে খড়ম পরিহিত এবং তাদের শারীরিক গঠনআকৃতি দেখে বুঝতে পারেন এগুলো বিত্তশালী ছিল এবং তারা বেশ উপাদেয় দামী খাবার খেত। এছাড়া গবেষণার পর আরো বোঝা যায় যে, এই মমিটি হৃদপিণ্ডজনিত কোন রোগে আক্রান্ত ছিল।
গবেষকরা এই মমিটির কংকালকে থ্রিডি স্ক্যানিং এর মাধ্যমে বুঝতে পারেন এর বয়স কেমন ছিল এবং তারা আরো অভূতপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এর ভেতরে আবিষ্কার করেন। বয়সের হিসেবটি তারা আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন মমিটির পেলভিস এবং দাঁতের গঠন বোঝার মাধ্যমে। তাদের অনেকগুলোর দাঁতের অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে তা দেখে বোঝা যাচ্ছিল তাদের দাঁতে বিভিন্ন রোগ ছিল। মস্তিষ্কের ভেতরের স্ক্যানিং এর মাধ্যমে দেখা যায় যে, এর ভেতরটি সবুজাভ নীল। এর কারণ মমি করার সময় মস্তিষ্কের ভেতরের এই অংশগুলো দূর করে এতে অন্যান্য পদার্থ দিয়ে দেওয়া হয়। এরফলে মমির স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। মমিটি সহজে নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
মমিটি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বিশেষ সংগ্রহ। এই মমিটির স্ক্যানিং এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, এই মমিটি আনুমানিক ৪০০০ বছর পূর্বের অর্থাৎ ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বের। এই মমিটির বসবাস ছিল নীল নদীর পাড়ে। যদিও বেশিরভাগ মিশরীয় সভ্যতা নীলনদকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি