দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার মাঝে প্রত্যেকে চায় একটু প্রশান্তি। এই প্রশান্তির জন্যই সবাই ছুটির অবসরে ছুটে যায় ভ্রমণে প্রকৃতির কাছাকাছি। যেখানে প্রকৃতি আর পরিবেশের মেলবন্ধনে মন হারিয়ে যেতে চায় তেমনি একটি জায়গা খুঁজে বেড়ায় সকলে। প্রাকৃতিক সে রকম একটি জায়গা হলো নেত্রকোনার বিরিশিরি।
নাগরিক যান্ত্রিকতা থেকে নিজেকে প্রকৃতির নিখাদ একটি স্বাদ দিতে ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার বিরিশিরি নামক স্থান থেকে। এখানকার প্রাকৃতিক সুশোভিত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ তো করবেই, তার সাথে সাথে আপনার মন হারিয়ে যাবে কোন এক অজানায়। বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার একটি গ্রাম। এই স্থানের মূল আকর্ষণ হলো বিজয়পুর চীনামাটির খনি।
এখানে আসলে আপনি আরো দেখতে পারবেন রানী খং গির্জা, কমলা রানী দীঘি, সোমেশ্বরী নদী। সোমেশ্বরী নদীর বহমান স্রোতধারা দেখলে আপনার মনে পড়ে যাবে বই এর পাতায় পড়া সেই নদীর কুল-কুল ধ্বনির কথা। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ যে চীনামাটির পাহাড় সে কথা তো আগেই বলেছি। এই চীনামাটির পাহাড়ের বুক ছিঁড়ে জেগে উঠেছে নীলচে পানির হ্রদ। চীনামাটির সাদা রঙ সেই নীলচে পানিকে করেছে আরো গাঢ়। তবে একেবারে বিরিশিরিতেই আপনি এমন সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন না। এজন্য আপনাকে যেতে হবে বিজয়পুর। রিক্সা কিংবা ভাড়ায়চালিত মটর সাইকেলের মাধ্যমে আপনি চলে যেতে পারেন সেখানে।
কংশটেপা নদী আর সোমেশ্বরী নদীর পাশের কাশবন, দূরের গারো পাহাড়ের গা ঘেঁষে থাকা নীলচে আকাশ আপনাকে করবে বিমোহিত। বর্ষায় সোমেশ্বরী নদীর তীরবর্তী সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। বিরিশিরিতে রয়েছে পাহাড়ি কালচারাল একাডেমী। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ প্রায় ৬০ শতাংশ অধিবাসী গারো, হাজং ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর। বিরিশিরিতে পা রাখা মাত্রই আপনি পাবেন কোলাহলমুক্ত একটি বাজার। তারপরেই দেখতে পাবেন সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠা পাহাড়ি কালচারাল একাডেমী। এই একাডেমীর জাদুঘরে পরিচয় পাবেন বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর কৃষ্টিকালচার সম্পর্কে। এখানে রয়েছে তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম কিংবদন্তী নেতা কমরেড মনি সিংহের স্মৃতিভাস্কর্য।
পথে যেতে যেতে প্রথমে দেখতে পাবেন সেইন্ট জোসেফের গির্জা। তারপর বিজয়পুরের পাহাড়ি জনপদ, তারপর বিজয়পুর চীনামাটির পাহাড়। পুরো পাহাড়ের মাটিই সাদা যেন রূপকথার কোন এক পাহাড় যেখানে অনিন্দ্য সুন্দর পরীরা বসবাস করে। পরীদের দেখা না পেলেও সৌন্দর্যের অপরূপ দেখা পাবেন এই কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে সোমেশ্বরী নদী। শেষ বিকেলের অস্তমিত সূর্যের লালচে আলোয় একবার তাকালে সেই রূপের মোহনীয়তা আপনাকে গ্রাস করবে।
এখানের রূপ সৌন্দর্য দেখার পর চলুন যাওয়া যাক দুর্গাপুর। এখান থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্তের কাছাকাছি পাহাড়ের চুড়ায় আছে রানীখং গীর্জা। বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রাণী দীঘি। এটি সাগরদীঘি নামেও পরিচিত। নিরিবিলি শান্ত দীঘির জলের পাশে বসে থাকলে মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। দীঘির পাশ থেকে যতদূর চোখ যায় শুধুই পাহাড়। এগুলো ভারতের অাসাম রাজ্যের পাহাড়।
কিভাবে যাবেন বিরিশিরি?
ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিরিশিরির সরাসরি বাস রয়েছে। এই বাসগুলোর শেষ গন্তব্য হচ্ছে বিরিশিরি। এছাড়াও দুর্গাপুরের বাসে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে সময় লাগবে প্রায় চার ঘণ্টা।
বিরিশিরিতে কোথায় থাকবেন?
বিরিশিরি কালচারাল একাডেমীর নিজস্ব গেস্ট হাউজ রয়েছে। বিরিশিরির কাছাকাছি এটিই সবচেয়ে ভালো জায়গা। জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, ওয়াইএমসিএ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন। তাছাড়া উপজেলা সদরে বিভিন্ন হোটেল রয়েছে।