দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিশেষ প্রভাব পড়ে। জলবায়ুর প্রভাবে কৃষক এবং দেশের সাধারণ মানুষ সবাই ক্ষতিগ্রস্থ হন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করলেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষম ধান, যা দেশের কৃষক তথা সকলেই বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
প্রতিবছরই বাংলাদেশের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বিশেষ প্রভাব পড়ছে নানাভাবে৷ এই প্রভাবে কৃষি ক্ষেত্রেও ঘটে থাকে বিপর্যস্ততা। ফসলের হানিসহ নানা রকম বিপর্যয়ে পড়েন কৃষক তথা পুরো দেশ। তবে এবার আশার কথা, এই প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম কিছু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা৷
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, ‘ব্রি’-র মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কয়েকটি বিষয় প্রতিবারই ঘটছে৷ যেমন খরা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, হঠাৎ বন্যা, লবণাক্ততা, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা ও গরম ইত্যাদি৷ এসব পরিবেশে মানিয়ে নিতে ‘ব্রি’ বেশ কয়েকটি ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন আমাদের বিজ্ঞানীরা, যেগুলো ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা চাষ করে সফল হয়েছেন৷’
ব্রি মহাপরিচালক বলেছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে যেখানে জমিতে লবণের পরিমাণ বেশি সেখানে রোপা আমন মৌসুমেও ব্রি ধান৪০, ব্রি ধান৪১, ব্রি ধান৫৩ এবং ব্রি ধান৫৪ – এই ৪টি জাত বেশ কার্যকর৷ আর বোরো ধানের জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান৪৭ ও ব্রি ধান৬১৷
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষম ধান
খরায় বেড়ে উঠতে পারে এমন জাতের কথাও জানালেন ব্রি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, দুই ধরনের খরা পরিস্থিতির হতে পারে৷ একটি হলো খরা সহনশীল আর অপরটি খরা পরিহারকারী৷
ধান আসার আগে যখন ফুল হবে সেই সময় হঠাৎ খরার আবির্ভাব ঘটে৷ এতে করে ধানের ফলন বাধাগ্রস্ত হয়৷ এই কথা বিবেচনায় এনেই খরা পরিহারকারী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। খরা মোকাবিলার জন্য জাত দুটি হলো ব্রি ধান৫৬ ও ব্রি ধান৫৭। এ দুটোই রোপা আমন ধানের জাত।
ধান পানিতে ডুবে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোপা আমন মৌসুমে আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি হয় যখন ধান লাগানোর পরে দেখা যায় যে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে হঠাৎ করেই ধান পানির নীচে ডুবে যায়৷ তিনি বলেন, এই অবস্থা প্রায় সপ্তাহখানেক বা কখনও তারও বেশি সময় ধরে থাকে৷ এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রয়েছে ব্রি ধান৫১ এবং ব্রি ধান৫২৷ এই ধান দুটি বর্ষায় ডুবে যাওয়া মাঠের ধানও রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বিশ্বে প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে৷ এর প্রভাব পড়ছে আমাদের দেশেও৷ ভৌগোলিক অবস্থান এবং নিত্যনতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ বেশিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
জলবায়ুর প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে সরকারি প্রচেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে ‘বারসিক’ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে শুধু খাপ খাইয়ে চললেই হবে না৷ বরং যথাযথভাবে এর মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিতে হবে সকলকেই৷ চিংড়ি চাষের জন্য অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ কেটে ‘কালভার্ট’ তৈরি করে লবণ পানির উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, স্থানীয় জনগণের প্রস্তাব এবং পরামর্শের ভিত্তিতে উপজেলা পর্যায়ে কৃষি জমি, ভূমি, মৎস্য আইন নীতিমালার সমন্বয় করে তার বাস্তবায়ন করতে হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী এবং জলাধারগুলোর ওপর সব ধরনের উন্নয়ন অবকাঠামো বাতিল করে জলপ্রবাহের প্রাকৃতিক গতিধারা নিশ্চিত করতে হবে, পরিবেশ এবং ক্রমপরিবর্তনশীল জলবায়ুকে বিবেচনা করে এলাকাভিত্তিক স্থানীয় ও সহনশীল কৃষি ফসলের আবাদ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে৷
বাংলাদেশ রিসার্চ সেন্টার ফর ইনডিজেনাস নলেজ (বারসিক)-এর নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন জানান, ‘ইনডিজেনাস নলেজ’ ব্যবহার করে এই ধরনেরই বিভিন্ন পরিকল্পনা, তা সরকারের সঙ্গে ‘শেয়ার’ ও তার বাস্তবায়ন করছে ‘বারসিক’৷ যেমন: ‘শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জের একটা এলাকা৷ সেখানে এক কিলোমিটার লম্বা একটা হ্রদের মতো রয়েছে৷ তাতে সব সময়ই নোনা পানি থাকতো৷ এই লেক’টা লিজ দেওয়া হতো শুধুমাত্র চিংড়ি চাষের জন্য৷ কিন্তু আমরা তাতে প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ করি, ওটির সংস্কার করাই৷ কমিউনিটি ও উপজেলা প্রশাসনও আমাদের সহযোগিতা করে৷ গত বছর আমন চাষের সময় দেখা যায় যে, সেখানে ১১ টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন হয়েছে৷’
জলবায়ুর সংকট নিরসনে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জাতিসংঘসহ বিশ্ব সব ফোরামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে৷ পরিবেশগত মানবিক এই বিপর্যয় হতে বাংলাদেশের জনগণকে রক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রশংসাসাপেক্ষ৷ কিন্তু প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় দেখছেন না বারসিক-এর নির্বাহী পরিচালক সুকান্ত সেন। ডিডব্লিউ-এর এক প্রতিবেদনে তিনি এ কথা বলেছেন৷