দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যানজটের কারণে নগরবাসীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। ১০ মিনিটের রাস্তা পার হতে কখনও কখনও ২ ঘণ্টা সময় চলে যায়। নগর জীবনের এমন এক পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনে নতুন কৌশল আবিষ্কার করলেন প্রকৌশলী কামরুল হাসান।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রকৌশলী কামরুল হাসান সম্প্রতি যানজট নিরসনের আবিষ্কৃত এই বিশেষ কৌশল ইতিমধ্যে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই পদ্ধতিতে একাধিক রাস্তার সংযোগস্থল কিংবা ইন্টার-সেকশনে কিছুটা পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আবার ক্রসিংয়ে কাছাকাছি সড়কের ভেতরে বিশেষ এক ধরনের (নিচের ছবিটিতে দেখানো হয়েছে) ইউ-টার্ন স্থাপন করতে হবে। এতেকরে সড়কে আর সিগন্যালের প্রযোজন পড়বে না। যে কারণে সিনগ্যাল বাতি কিংবা ট্রাফিক পুলিশও লাগবে না।
প্রকৌশলী কামরুল হাসানের গবেষণা অনুযায়ী সংযোগস্থল কিংবা ইন্টার-সেকশনে পরিবর্তন করলেই হলো। প্রকৌশলী কামরুল হাসানের গবেষণা বলছে, শাহবাগের চার রাস্তার ইন্টার-সেকশনের ক্ষেত্রে সুবিধা মতো উত্তর-দক্ষিণ অথবা পূর্ব-পশ্চিম-এর যেকোনো একটি সড়ক দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলাচল করতে পারবে। সরাসরি চলাচল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সড়কে স্থায়ী ডিভাইডার স্থাপন করতে হবে। আবার যারা সরাসরি যেতে পারবে না, যেমন লোকাল গাড়ি- তাদের জন্য প্রতিটি সড়কে অভ্যন্তরীণ ইউ-টার্ন থাকবে। এই ইউ-টার্ন ব্যবহার করে কাঙ্ক্ষিত দিকে যাওয়া যাবে। বলা হয়েছে, প্রকৌশলের ভাষায় ইন্টার-সেকশন বন্ধ করা হলে, শুধু ডানে মোড় নেওয়ার সুযোগ থাকে না। তাই ইন্টার-সেকশনের কাছাকাছি মূলত ডানে মোড় নেওয়ার জন্যই এই অভ্যন্তরীণ ইউ-টার্ন ব্যবহার করা হবে।
প্রকৌশলী কামরুল হাসানের গবেষণা অনুযায়ী বলা হয়েছে- ধরা যাক, শাহবাগ মোড় দিয়ে উত্তর-দক্ষিণের (বাংলামটর – টিএসসি) সড়ক দিয়ে সরাসরি গাড়ি চলাচল করবে। ডিভাইডারের কারণে পূর্ব-পশ্চিমের (মৎস্য ভবন হতে কাঁটাবন) গাড়ি সরাসরি চলতে পারবে না। বাংলামটর হতে আসা গাড়ি টিএসসি গেলে সরাসরি ও সড়কে সোজা চলে যাবে। আবার মৎস্য ভবন যেতে চাইলে বাঁয়ে মোড় নিয়ে চলে যাবে। তবে কাঁটাবন যেতে চাইলে শাহবাগ মোড় দিয়ে সরাসরি সড়ক অতিক্রম করে টিএসসির দিকে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ইউ-টার্ন ব্যবহার করে ডানে মোড় নিয়ে তবেই যেতে হবে। একইভাবে টিএসসি থেকে আসা গাড়ি বাংলামটরে সরাসরি, কাঁটাবনে বাঁয়ে মোড় নিয়ে ও মৎস্য ভবনের দিকে যেতে চাইলে অবশ্যই শাহবাগ ইন্টার-সেকশন অতিক্রম করে কিছুটা বাংলামটরের দিকে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ইউ-টার্ন নিয়ে তবেই ডানে ঘুরে যেতে হবে। আর সরাসরি যেতে না পারায় পূর্ব-পশ্চিমের (মৎস্য ভবন হতে কাঁটাবন) গাড়ি যার যার সড়কে বাঁয়ে মোড় নিয়ে উত্তর-দক্ষিণের সড়কে সরাসরি প্রবেশ করে ইউ-টার্ন ব্যবহার করে গাড়ি ঘোরাতে পারবেন। যেমন- মৎস্য ভবন থেকে আসা গাড়ি বাঁয়ে মোড় নিয়ে টিএসসির দিকে ইউ-টার্নের মাধ্যমে ঘুরে সরাসরি রাস্তার বাঁয়ের লেনে ঢুকে কাঁটাবন এবং সোজা গিয়ে বাংলামটরের দিকেও যেতে পারবে। একইভাবে কাঁটাবনের গাড়ি বাঁয়ের লেনে ঢুকে ইউ-টার্ন দিয়ে ঘুরে টিএসসি অথবা মৎস্য ভবনের দিকেও যেতে পারবে।
প্রকৌশলী কামরুল হাসানের মনে করেন, তিন সড়কের ইন্টার-সেকশনে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা আরও সহজ হবে। এই পদ্ধতিতে শুধু ঢাকা শহর নয়, যেকোনো এলাকার যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে। সড়কের ভেতরে ইউ-টার্ন করতে সড়কের জন্য শুধু কিছুটা বাড়তি জায়গা প্রয়োজন হবে। সরকার চাইলে বাড়তি জায়গার ব্যবস্থা করা কোনো কঠিন কিছু নয়।
যানজট নিরসনে প্রকৌলশী কামরুল হাসানের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি ‘রিলিজ ফ্রম ট্রাফিক জ্যাম: নো ভেহিকল হেজ টু স্টপ ফর এ সেকেন্ড’ শিরোনামে ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব সায়েন্টিফিক এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ তাদের চলতি বছরের আগস্ট সংখ্যায় প্রকাশ করেছে। এর আগে এটি ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের জার্নালে।
১০ বছরে বিশেষজ্ঞ নন এমন ৫ জন নাগরিক যানজট নিরসনে আলাদা তত্ত্ব দিয়েছেন। কয়েক বছর আগে ট্যাক্সিচালক মোহাম্মদ আলীর যানজট নিরসন পদ্ধতি প্রয়োগ করে সুফলও পাওয়া গেছে। স্থায়ীভাবে যানজট নিরসনে কোনো পদ্ধতিই আজ পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারেনি সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো। অথচ যানজট আমাদের জন্য একটি বড় সমস্যা।
যানজটের কারণে যেমন শ্রম সময় নষ্ট হচ্ছে, তেমনি প্রচুর জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। তাই যানজট নিরসনে প্রকৌলশী কামরুল হাসানের উদ্ভাবিত এই পদ্ধতিটি সরকারিভাবে মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।