দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাবুই পাখির নাম শুনলেই মনে পড়ে অনেক কথা। তাল গাছের সাথে ঝুলন্ত বাসা। কি সুন্দর দেখতে সে বাসা। নিপুণ শিল্পের কারিগর এই বাবুই পাখি। সেই বাবুই পাখির কথায় আবার আপনাদের মনে করিয়ে দেবো। ছোট কালে কত দেখেছি এই বাবুই পাখির বাসা। নিখুঁত বাসা যে পাখি বানায় তাকে নিপুণ শিল্পের কারিগর বলাই যেনো শ্রেয় হবে।
বাবুই পাখির কথা বলতে গিয়ে সেই কবিতার কথাটি মনে পড়ে গেলে:
বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই-/কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই;/আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,/ তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে।/বাবুই হাসিয়া কহে সন্দেহ কি তায়/কষ্ট পাই তবু থাকি নিজের বাসায়;/ পাকা হোক তবু ভাই পরের ও বাসা,/ নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচাঘর খাসা।
রজনীকান্ত সেনের বিখ্যাত স্বাধীনতার সুখ কবিতা আজো ফেরে মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু কবিতার চিরচেনা বাবুই পাখির স্বাধীনতা আর সুখ দুই-ই আজ হুমকির মুখে। বসবাস উপযোগী পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে শৈল্পিক বাসার কারিগর বাবুই পাখি। এখন আর খুজে পাওয়া প্রায় দুষ্কর। ক্রমেই বিলিন হয়ে যাচ্ছে এই পাখি।
১০-১৫ বছর আগেও চোখে পড়ত বাবুই পাখি। এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। সারিবদ্ধ একহারা তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের কারুকাজ করা শৈল্পিক বাসা। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ। নির্বিচারে বৃনিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে এ পাখি আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
নিপুণ শিল্পকর্মে গড়ে তোলা কুঁড়েঘরসদৃশ দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি সত্যিই বিখ্যাত। নলখাগড়া ও হোগলা পাতা দিয়ে বাবুই বাসা বুনে থাকে। সেই বাসা যেমন আকর্ষণীয় তেমন মজবুত। শক্ত বুননের বাসা সহজে ছেঁড়া যায় না। প্রচণ্ড ঝড়ে ছিঁড়ে পড়ে না। এ কারণে অনেকে একে তাঁতিপাখি বলে। এই পাখির বাসা মানুষের মানবিক ও সৌন্দর্যবোধকে জাগ্রত করার পাশাপাশি দেয় স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা।
কিভাবে তৈরি করে এই বাসা
বাসা বানোনোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সারায়। পেট দিয়ে ঘসে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দু’টি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে এক দিকে বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্য দিকে লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ তৈরি করে। কথিত আছে, রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকি ধরে এনে গোঁজে। বাবুই গ্রামের তাল, নারকেল, খেজুর, রেইনট্রি ও আখক্ষেতে দল বেঁধে বাসা বোনে। বাবুই পাখির গোশত সুস্বাদু হওয়ায় এক শ্রেণীর শিকারি বাসা ভেঙে পাখি ধরে নিয়ে যায়। এ কারণেই বাবুইর সংখ্যা দিনকে দিন কমে যাচ্ছে।
তিন প্রজাতির বাবুই দেখা যায়
দেশী, দাগি ও বাংলা এই তিন প্রজাতির বাবুই রয়েছে। এদের মধ্যে দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুইর প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। তবে দেশী বাবুই গ্রাম-গঞ্জে এখনো কিছু দেখা যায়। এরা সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু ও রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে।
আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহি এই বাবুই পাখি ও তার দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা যাতে আমাদের সমাজ থেকে চলে না যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তালজাতীয় গাছে এ পাখি বাস করত। গাছ কমে যাওয়ায় বাবুই পাখির আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়াই বাবুই পাখি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাই বাবুই পাখি ও তার বাসা টিকিয়ে রাখতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।