দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ধূমপানে বিষপান জেনেও অনেকেই ধূমপান ছাড়তে পারেন না। এই না ছাড়তে পারার বেশির ভাগ কারণটাই মানসিক এবং পরিবেশগত। তাই জেনে নেয়া ভালো কিভাবে ধূমপান ছাড়া যেতে পারে। একবারের চেষ্টায় ধূমপান ছাড়া যাবে এমনটা আশা করা মস্ত বড় ভুল হবে। বর্তমানে প্রতি চার জন পুরুষের এর মধ্যে একজন এবং পাঁচ জন নারীর মধ্যে একজন কোন না কোন ভাবে ধূমপান করেন।
অনেক ধূমপায়ী এটা বিশ্বাসই করতে চায় না এটা নীরব মৃত্যুর কারণ। একজন ধূমপায়ী নিজের যেমন ক্ষতি করেন অন্য জনেরও ক্ষতি করেন অজান্তেই। ছোট বড় অনেক রোগ কিংবা হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, উচ্চ রক্তচাপের মতন নানা রোগব্যধীর ঝুকি বাড়িয়ে দেয় ধূমপান। তাই স্বাস্থ্য সচেতন থাকা দরকার। দরকার ধূমপান থেকে বিরত থাকা। ধূমপান থেকে বিরত থাকা নানা পর্যায়ক্রমিক উপায় এর মাধ্যমে হতে পারে। কেবল সিগারেট খাওয়া বন্ধ করলেই ধূমপানে আসক্তি চলে যাবে না বরং নিয়মিত চর্চার মধ্যে কতকগুলো বিষয় নিয়ে আসতে হবে।
সিগারেট এ ব্যবহৃত নিকোটিন ধূমপান আসক্তি অন্যতম কারণ। একজন ধূমপায়ী এটা মনে করতে পারেন ধূমপান যদি ক্ষতিকারক হয়ে থাকে তবে এতো মানুষ কেন ধূমপান করেন। সম্ভবত এই কারণে ধূমপান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।
গবেষকগণ অনেক টুলস, পদ্ধতি কিংবা প্রোগ্রাম বের করেছেন ধূমপান থেকে বিরত থাকতে। আপনি যদি সচেতন ভাবেই ধূমপান থেকে মুক্ত হতে চান অবশ্যই একজন এক্সপার্ট ডাক্তার এর শরানাপন্ন হতে পারেন। এছাড়াও আমরা আরো কতকগুলো পদ্ধতি জানবো যার মাধ্যমে কিছু চর্চা করা যেতে পারে ধূমপান থেকে দূরে থাকার জন্য।
তালিকা করা কখন কোথায় ধূমপান ভালো লাগে
কেস স্টাডিতে দেখা যায় ব্যক্তি বিশেষে ধূমপান এর নির্দিষ্ট স্থান কাল পাত্র আছে। আপনি সৎ ভাবে একটি তালিকা তৈরি করতে পারেন। সময় স্থান টুকে নিতে পারেন যে সময়টা আপনি ধূমপানে অভ্যস্ত। এখন যেটা করতে হবে। ঐ সময়গুলো ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। পরিবার বন্ধু বান্ধবদের সময় দিতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই যাদের দেখলে যেখানে গেলে সিগারেট ধরতে ইচ্ছে করে তা এড়িয়ে চলবেন।
তালিকা করা কেন ধূমপান ছাড়া কঠিন কাজ
ধূমপান ছাড়তে না পারার যুক্তি নিজের কাছেই থাকতে পারে। যুক্তিগুলো লিখে ফেলতে পারেন। নিজে নিজে চিন্তা করতে পারেন যুক্তিগুলো কতটা শক্তিশালী। আপনি মনে করতে পারেন ধূমপান আপনাকে ফ্রেশ কর্মমুখী করে তোলে। দীর্ঘক্ষণ কাজ করার জড়তা দূর করে। আপনি এবার চিন্তা করুন ধূমপানের বদলে ৫মিনিট হাঁটা চলা করা যায় কিনা। ৫ মিনিট এর হাঁটা চলা আপনাকে আরো প্রাণবন্ত করতে পারে। যুক্তির বিকল্প কিছু আপনাকে নিয়ে আসতে হবে। আর মনকে প্রবোধ দিতে হবে যে নিকোটিন এক প্রকার ড্রাগ।
ধূমপান নিবারণ দিবস
একটি ব্যক্তিগত দিবস ঠিক করা। যখন থেকে আপনি ধূমপান ছাড়ছেন বলে মনে করেন। অন্যান্য বিভিন্ন দিবস এর মতন আপনার নিজস্ব এই ধূমপান নিবারণ দিবসে আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন, এর ফলে আপনার কি কি সুবিধা হচ্ছে তা ভাববেন। প্রয়োজনে লিখে রাখবেন। সম্ভব হলে পরিবার পরিজন নিয়ে উদযাপনও করতে পারেন। এটা আপনাকে প্রেরণা দিবে।
আপনি কেন ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করছেন তা লিখে রাখা
ধূমপান ছাড়ার একটি শক্তিশালী কারণ থাকতে পারে আপনার। থাকতে পারে আরো অনেক কারণ। সবগুলো কার্ডে লিখে রাখতে পারেন। কার্ড মানিব্যাগে রেখে দিবেন।
ধূমপান করতে ইচ্ছা হলে কি করবেন
একটা কাজের তালিকা রাখা যেমন হাটাহাটি করা, পানি খাওয়া, কাজের ডেস্ক গোছানো, রুম পরিষ্কার করা, প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটানো, গান শোনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি। কিন্তু ধূমপান করা যাবে না। এর সান্নিধ্যেও আসা যাবে না। ধূমপান যেখানে হয় চায়ের দোকান আড্ডার স্থান এড়িয়ে চলতে হবে।
অন্য অভ্যাস তৈরি করা যা ক্ষতিকর নয়
ভেষজ চা, রং চা, মশল্লা চা এর অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে। কিংবা বাদাম খাবার অভ্যাস, চুইংগাম, লজেন্স এর অভ্যাস করা যেতে পারে। একটা অভ্যাস দিয়ে আরেকটা অভ্যাস ঘায়েল করা একটা বড় অস্ত্র।
আপনার সফলতা নিয়ে ভাবুন
প্রত্যেক মানুষই কোন না কোন জায়গায় সফল। আপনার সফলতার জায়গা গুলো নিয়ে ভাবুন। এবং নিজেকে প্রবোধ দিন আপনাকে দ্বারা সম্ভব। আপনি পারবেন এই বিশ্বাসই আপনাকে ধূমপান থেকে অনেকটা দূরে রাখবে। সব সময় ভাববেন ধূমপান ত্যাগ করা খুব সোজা কাজ। এর চেয়ে অনেক কঠিন কাজ আপনি করেছেন। নিজের উপর আস্থা রাখুন।
দৈনিক রুটিনে আর লাইফ স্টাইলে পরিবর্তন আনা
মানুষ কাজ করতে করতে একটা নিয়মের মধ্যে চলতে থাকে। তখন নিয়ম ভাংগা কষ্ট হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই চেষ্টা করুন রুটিন এর পরিবর্তন আনতে। বসার চেয়ার কিংবা কাজ করার ডেস্ক একটু পাল্টে নিতে পারেন। সকাল বেলা ঘুম থেকে একটু আগে উঠে দেখতে পারেন। খাবার গ্রহণ খাদ্যাভাসেও নিয়ে আসতে পারেন কিঞ্চিত পরিবর্তন।
ধূমপান করার টাকা গ্লাস জারে জমানো
যে টাকা দিয়ে আপনি সিগারেট কিনতেন প্রতিদিন তা একটি গ্লাস জারে জমিয়ে রাখতে পারেন। এবং লক্ষ্য করতে পারেন কত কত টাকা আপনি একটা অপ্রয়োজনীয় কাজে ক্ষয় করতেন। জমানো টাকা দিয়ে পরিকল্পনা করতে পারেন প্রিয় জনকে কোন উপহার কিনে দেয়ার কিংবা ভালো ভিন্ন কিছু করার।
ধূমপানমুক্ত এলাকা তৈরি
নিজের রুম আংগিনা বারান্দা ধূমপানমুক্ত রাখুন। বাসায় ধূমপান বিরোধী পোস্টার লাগাতে পারেন। এ্যাশট্রে সিগারেট এর বক্স ঘরে কোন ভাবেই রাখা যাবে না। আপনার চারপাশে ধূমপানমুক্ত এলাকা তৈরিতে উদ্যোগি হন।
ধূমপানের ক্ষতিকর দিকের তালিকা
ধূমপানের ক্ষতিকর তালিকা ঘরের বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে দিন। এটা হতে পারে পড়ার টেবিল এর সামনে কিংবা দরজায়। তালিকা:
• ধূমপান ফুসফুস, কিডনি, মুখ, এবং অন্যান্য ক্যানসারের জন্য ঝুকিপূর্ণ।
• ধূমপান হাড় ক্ষয় করে
• ধূমপান মানসিক ক্ষমতা এবং স্মৃতিশক্তি লোপ করে
• হৃদরোগের অন্যতম কারণ ধূমপান
• বিষন্নতা ধূমপানের ফলে দেখা যায়
• স্বাধ গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে
• ঘ্রাণ নেয়া ক্ষমতা নষ্ট করে
• ওজন কমিয়ে দেয় ধূমপান
• ক্ষুধা রুচি কমিয়ে দেয় ধুমপান
• স্ট্রোক উচ্চ রক্তচাপ একজন ধূমপায়ীর নিয়মিত সঙ্গী
• ডায়েবেটিস এর ঝুকি বাড়ায়
সব শেষে বিশ্বাস করতে শিখুন আপনি মানুষ। চাইলেই আপনি পারেন। অন্য আট দশটা মানুষের মতই আপনি চলতে পারেন। নিজের ক্ষতি করছেন না। পরিবেশরও ক্ষতি করছেন না। একটি সুখী স্বাস্থ্যকর জীবন এর দাবিদার আপনিও।