দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে কোমল পানীয় ছাড়া যেনো চলেই না। অতিথি আপ্যায়ন থেকে শুরু করে সকল সময় কোমল পানীয় অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কিন্তু মানবদেহের জন্য কতখানি ক্ষতিকর কোমল পানীয় তা কী আমরা জানি?
জানা গেছে, এক চুমুক কোলা এক ঘণ্টা ধরে মুখের ভেতর রাখলেই দাঁতগুলো নাকি হলুদ হয়ে যাবে। টয়লেট পরিষ্কার করতে কোক ঢেলে এক ঘণ্টা পর ওয়াস করলে দেখা যাবে যে, রেগুলার টয়লেট ক্লিনারের চেয়ে সেটি বেশি পরিষ্কার করেছে। আবার ব্যাটারিতে জং ধরা কাটাতে, কিংবা কাপড়ে মাংসের ঝোল লেগে গেলে কোক ব্যবহার করলে ওই দাগ থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে। শুধু তাই নয়, এক গ্লাস কোকের ভেতরে একটি দাঁত রেখে দিলে এক সপ্তাহ পর সেই দাঁতের নাকি অস্তিত্ব থাকবে না।
এমন ক্ষমতাশালী কোমল পানীয় সম্পর্কে এসব মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞ জনৈক চিকিৎসক। চিকিৎসকদের মতে, কোমল পানীয় প্রস্তুত করার সময় যেসব রং মেশানো হয়ে থাকে, তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ওই পানীয়কে আকর্ষণীয় করতে যেসব ‘ফুড অ্যাডিটিভ’ ব্যবহার করা হয় সেই উপাদানও বেশ ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোমল পানীয় মোটেও উপকারী নয়, এটি মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করে।
সাধারণতভাবে যেকোনও ‘রিচ ফুড’ কিংবা মসলাযুক্ত খাবার বা নিয়মিত আড্ডায় হজমের উপকারী হিসেবে কোমল পানীয় ব্যবহার করা হয়। তবে না জেনে বা না বুঝে কোমল পানীয় পান করে আমরা নিজেদের কতোখানি সর্বনাশ করছি, সে হিসাব আমরা রাখি না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোমল পানীয় মোটেও উপকারী কোনও খাবার নয়, বরং কোমল পানীয়ের কারণে নানা অসুখের সূত্রপাত হয়ে থাকে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, একটি ৫০০ গ্রামের কোমল পানীয়ের বোতলে ১৭০ ক্যালরি সোডা এবং ১৫ চামচ চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, হার্ট অ্যাটাক, দাঁতের ক্ষয় ও বন্ধ্যাত্বের মতো রোগের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধু তাই নয়, লিভার সিরোসিস, হাঁপানিরোগসহ ফুসফুসের নানা ধরনের জটিল রোগ, ওজন বেড়ে যাওয়া, পাকস্থলীতে ক্যান্সার এমন কি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকগুণ বেড়ে যেতে পারে কোমল পানীয় গ্রহণের কারণে।
সংবাদ মাধ্যমকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘কোমল পানীয় খেলে সাময়িক তৃষ্ণা মেটে এটি হয়তো ঠিক, সাময়িক শান্তি হয় তাও হয়তো ঠিক, তবে দীর্ঘমেয়াদী বিবেচনায় এর প্রতিক্রিয়া খুব সাংঘাতিক। কোনওভাবেই এটি স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, কোমল পানীয়তে ব্যবহৃত রিফাইন সুগার মানবদেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর।
অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘প্রচলিত একটি বিষয় রয়েছে কোমল পানীয় হজমে সাহায্য করে। তবে মানব শরীর সাধারণতভাবে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় খাবার হজম করে থাকে। অথচ কোমল পানীয় যখন গ্রহণ করা হয় তখন এর তাপমাত্রা থাকে মাত্র ৩ হতে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি খাবারের পরপরই যখন একেবারে ফ্রিজ হতে বের করা কোমল পানীয় পান করা হয়, তখন হজমে সাহায্য করা তো দূরে থাক, সেটি ভেতরে আরও পচন ধরায়!’
ডা. গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের মতে, যাদের হার্টের সমস্যা, কোলেস্টরেল বেশি, ডায়াবেটিস রোগি, ওজন বেশি, তাদের কোনওভাবেই কোমল পানীয় পান করা যাবে না।
এদিকে পশ্চিমা বিশ্বের উদাহরণ টেনে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলোতে মুটিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো এই কোমল পানীয়। এই অতিরিক্ত ওজনই মানবদেহের সব রোগের অন্যতম উৎস।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘কোমল পানীয় যেনো কোনো অবস্থাতেই বরফের মতো জমাট না বাঁধে, সে কারণে এতে ইথিলিন গ্লাইকোল নামে এক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে, যা অনেকটা আর্সেনিকের মতো ক্ষতিকর!’
ইথিলিনকে বিষ হিসেবে আখ্যায়িত করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যারা অধিকমাত্রায় এই জাতীয় পানীয় খেয়ে থাকেন, তাদের কিডনিতে পাথর জমা হওয়ার হার প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। আবার এসব পানীয়তে যে স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা মূত্রাশয় ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই কোনওভাবেই কোমল পানীয় কোনও কোমল একটি বিষয় নয়, প্রতিটি সচেতন মানুষের উচিৎ, যেকোনও রকম কোমল পানীয় পরিহার করা। কোমল পানীয় পান করার অর্থ হলো জেনে বুঝে বিষ পান করার মতো একটি বিষয়!’
অর্থাৎ কোমল পানীয় পান করতে হলে বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে এর ক্ষতিকারক বিষয়টি আমাদের নজরে আসবে।