দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করে যে ব্যক্তি বীরদর্পে দেশে ফেরার কথা, সেই মোহাম্মদ খালেদ হোসেন যেমন মৃত্যুর কাছে সেদিন হার মেনেছিলেন ঠিক তেমনি বৈরি আবহাওয়ার কাছেও বোধ হয় তিনি হেরে গেলেন!
বৈরি আবহাওয়ার কারণে গতকাল তাঁকে উদ্ধারের জন্য নিয়োজিত শেরপার দলটি উদ্ধারে অপারগতা প্রকাশ করার কারণে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছে। দু’বার অভিযান চালিয়ে ডেথ জোন থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন শেরপারা।
উদ্ধারকারী দল সেভেন সামিট নেপালি কর্তৃপক্ষের কাছে ৫ই জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছে। গতকাল ও গত পরশু রোববারের অভিযানে ডেথ জোনে খালেদের ব্যাগ ও মাস্ক উদ্ধার করেছেন শেরপারা। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি শামীমা চৌধুরী গতকাল সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সজলের মরদেহের সন্ধানে শেরপারা সোমবার সকালে দ্বিতীয় দফায় এভারেস্টের সাউথ সামিটে ওঠেন। কিন্তু তারা সেখানে তার লাশ খুঁজে পাননি। সেখানে প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে। ফলে শেরপারা বেইজ ক্যাম্প ৪-এ ফিরে এসেছেন। তিনি আরও জানান, খালেদের লাশ খোঁজার জন্য নেপালি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ৫ই জুন পর্যন্ত সময় নেয়া আছে। আবহাওয়া ভাল হলে অথবা কোন খবর পাওয়া গেলে শেরপারা আবারও সেখানে অভিযান চালাবেন। গতকালের অভিযানে সাউথ সামিটে খালেদের ব্যবহৃত দু’টি মাস্ক উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত রোববারও হিমালয়ের ৮৭৫০ মিটার উচ্চতায় সাউথ সামিটে খালেদের মরদেহের খোঁজে অভিযান চালান শেরপারা। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ‘ডেথ জোনে’ অবস্থান করে তার ব্যাগ খুঁজে পান তারা। খালেদের মরদেহ বরফের নিচে আটকে থাকতে পারে বলে শেরপারা ধারণা করছেন।
ধারণা করা হচ্ছে খালেদের মৃতদেহ বরফের নিচে ডুবে গেছে। তবে স্থানীয় অভিজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, যদি খালেদের মৃতদেহ তিব্বতের দিকে চলে যায় সেক্ষেত্রে তাকে আর কোন দিনই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। তবে যদি তিব্বতের দিকে না গিয়ে নেপালের মধ্যেই থেকে থাকে তাহলে পরবর্তী সিজেনে আবার তার লাশ উদ্ধার করা যেতে পারে। কারণ সেখানে এরকম বহু মৃতদেহ রয়েছে বছরের পর বছর। বরফের কারণে মৃতদেহ নষ্ট হয় না। তবে পরবর্তী সিজেনে উদ্ধার করতে গেলে আবারও বহু অর্থের প্রয়োজন হবে।
উল্লেখ্য, এভারেস্ট চূড়া জয় করে ফেরার পথে গত ২০শে মে মোহাম্মদ খালেদ হোসেন সজল নিহত হন। ধারণা করা হচ্ছে, সজল খালেদের মৃতদেহ হিমালয়ের প্রায় ৮৭৫০ মিটার উচ্চতায় সাউথ সামিট জোনে রয়েছে। খালেদের পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার মরদেহ উদ্ধারে শুক্রবার সেভেন সামিট ট্র্যাকিং লিমিটেডের সঙ্গে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, শনিবার হিমালয়ের বেস ক্যাম্প থেকে সাউথ সামিটের পথে রওনা দেন ১২ জনের শেরপা দল। তাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক সহায়তা সরবরাহের জন্য একটি ব্যাকআপ দলও রয়েছে। প্রতি আধা ঘণ্টা পরপর উদ্ধার তৎপরতার সর্বশেষ অবস্থা ও ভিডিও চিত্র সরবরাহের পাশাপাশি স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেভেন সামিট কর্তৃপক্ষ। শেরপারা সজল খালেদের মৃতদেহকে বেস ক্যাম্প-২ পর্যন্ত আনলে সেখান থেকে তাকে হেলিকপ্টারে কাঠমাণ্ডুতে আনার কথা ছিল।
এদিকে খালেদের স্ত্রী শৈলী বর্তমানে কাঠমাণ্ডুতে অবস্থান করছেন।