দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক বৃদ্ধাকে কোলে করে গাড়িতে তুললেন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল। এই দৃশ্য এখন সোস্যাল মিডিয়াসহ অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের বহুল প্রচারিত সংবাদে পরিণত হয়েছে।
![এক বৃদ্ধাকে কোলে করে গাড়িতে তুললেন ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি! [ভিডিও] 1 এক বৃদ্ধাকে কোলে করে গাড়িতে তুললেন ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি! [ভিডিও] 1](https://thedhakatimes.com/wp-content/uploads/2017/08/Thakurgaon-DC-and-elderly-woman-750x430.jpg)
আমাদের দেশের যারা বড় কোনো পদে থাকেন, সাধারণত তাদের ধারে কাছে সাধারণ মানুষ ভিড়তেও পারেন না। নিজের পদ ও পদবীর মর্যাদা রক্ষা করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। তবে এর বাইরেও যে দু’চার নেই তা বলা যাবে না। যেমন ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল এমন এক মহানুভবতার নজির সৃষ্টি করলেন। তিনি অসহায় এক বৃদ্ধাকে নিজে কোলে করে তুলে নিয়ে গেলেন গাড়িতে করে।
নিজ সন্তান ও বউমার নির্যাতনে রক্তাক্ত বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুন (৯৮) কে আব্দুল আওয়াল যখন কোলে করে অ্যাম্বুলেন্সে তুলছিলেন সেই দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী থমকে যান। একজন জেলা প্রশাসককে এই কাজটি করতে দেখে সবাই যেনো নীরব হয়ে তাকিয়ে ছিলেন। গত পরশু (বুধবার) সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসক এবং সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি দেখে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের মানুষজন চমকে ওঠেন।

এসময় এলাকার মানুষজন বলেন, যে কাজ করা দরকার ছিল নিজের ছেলের, সেই কাজটি করলেন বড় স্যার!
তার আগের দিন (মঙ্গলবার) দুপুরে শতবর্ষী এই বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুন বউমার কাছে খাবার জন্য ভাত চাইলে আকস্মিকভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ৬০ বছর বয়সী ছেলে বদরউদ্দিন এবং তার স্ত্রী। একপর্যায়ে তাদের মারধরের শিকার হন শতবর্ষী ওই বৃদ্ধা। এসময় বাম চোখের নিচে গুরুতর জখমও হন এই বৃদ্ধা।
ঘটনাটি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়ায় ওই বৃদ্ধার জন্য অনেকে কষ্ট প্রকাশ করে ছেলের শাস্তিও দাবি করেন।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল গভীর রাত পর্যন্ত ঠাকুরগাঁওয়ের বানভাসী মানুষের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করায় তিনি বিষয়টি জানতে পারেন দেরিতে। এরপর গভীর রাতে তিনি ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করতে যাওয়ার বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
বুধবার সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল, স্থানীয় সাংবাদিকসহ হাজির হন ওই বৃদ্ধার বাড়িতে।
জেলা প্রশাসকের উপস্থিতির খবর পেয়ে সেখানে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ বেগ, ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনিসহ এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরাও হাজির হন। পরে সবার উপস্থিতিতে তাসলেমা খাতুনকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঠাকুরগাঁওয়ের পথে রওনা হন তিনি। তারপর দুপুর ১২টায় তাসলেমা খাতুনকে জেলা প্রশাসক এবং সিভিল সার্জনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পার্থ সারথী দাস জানিয়েছেন, বৃদ্ধা মায়ের চোখের ক্ষত খুবই গুরুতর বলে মনে হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার সব চিকিৎসা ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল হতে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আবু মোহাম্মদ খায়রুল কবির।
জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, রাতে যখন ঘটনাটি জানতে পারলাম এক বৃদ্ধ মা তার সন্তানের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন, তখন বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যথিত করেছে।
সে কারণে সকাল ৭টায় বৃদ্ধা মায়ের খোঁজে হরিপুর গেলাম। পরে স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৃদ্ধা মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। তার চিকিৎসার সব খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।
দেখুন ভিডিওটি