দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মশার যন্ত্রণায় অস্থির সবাই। মশা মারার জন্য নানা আয়োজন করতে হয় সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই। তবে এবার মশা ধ্বংস করার এক পদ্ধতি আবিষ্কার করলো গুগল!
মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে সারা বিশ্বজুড়ে। মশার যন্ত্রণায় অস্থির সবাই। এমন পরিস্থিতিতে মশার বংশ চিরতরে ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুগলের মূল সংস্থা ‘অ্যালফাবেট’! এখন থেকে হাজারে হাজারে মশা ছেড়েই মশার বংশ ধ্বংস করবে এই সংস্থাটি! নির্মূল করবে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো কঠিন কঠিন সব রোগ। মূলত মশাদেরই বানিয়ে দেওয়া হবে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’ হিসেবে!
এইসব মশাদের নামানো হবে এক ‘যুদ্ধে’, তাদের বিরুদ্ধেই। তবে যুদ্ধে যেমন সুন্দরী গুপ্তচরদের ফাঁদে ফেলে বিপক্ষের সেনাবাহিনীর গোপন খবরাখবর নেওয়া হয়ে থাকে, তাদের রণকৌশল আগাম জেনে ফেলার নিয়ম রয়েছে, অনেকটা সে রকমই ফাঁদ, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর বিষে ভরা ‘রাক্ষুসে’ স্ত্রী মশাদের টেনে আনা হবে গুগলের ‘পছন্দের’ পুরুষ মশাদেরকে তাদের সামনে এগিয়ে দিয়ে। স্বাভাবিক মিলনের প্রলোভন দেখানো হবে তাদেরকে।
‘রাক্ষুসে’ স্ত্রী মশাদের তো জানা থাকবে না, যে পুরুষ মশাদের ভালো লেগেছে, যাদের সঙ্গে তাদের মিলন হয়েছে, সেই পুরুষ মশাদের শরীরে গুগলের বিজ্ঞানীরা ঢুকিয়ে দিয়েছে ‘উলবাচিয়া’ প্রজাতির একটি বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়া। যা মূলত স্ত্রী মশাদের বন্ধ্যা করে দেবে। যে কারণে মিলনের পরেও স্ত্রী মশারা আর ডিম পাড়তে পারবে না কোনো অবস্থাতেই। তাই মশার বংশও বাড়বে না। মশার বংশ ধ্বংস হতে বেশি সময়ও লাগবে না এতেকরে। যে কারণে নির্মূল হবে বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো ‘এডিস ইজিপ্টাই’ প্রজাতির মশাবাহিত ভয়ঙ্কর রোগের জন্ম এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার যাবতীয় সম্ভাবনাও আর থাকবে না।
মিলনের ফাঁদে ফেলে মশা দিয়ে মশা মারার এই অভিনব পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেছেন গুগলের মূল সংস্থা ‘অ্যালফাবেট’ এবং তাদেরই আরেকটি ইউনিট ‘ভেরিলি লাইফ সায়েন্স’-এর জীববিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি তারা তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটির পরীক্ষা-নিরীক্ষাও চালিয়েছেন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রেসনো কাউন্টিতে। এভাবেই গোটা বিশ্বে মশাবাহিত রোগগুলো নির্মূল করা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
সংস্থাটির মুখপাত্র ক্যাথলিন পার্কস বলেছেন যে, ‘একটি উঁচু মার্সিডিজ ভ্যান ছুটতে ছুটতে ফ্রেসনো কাউন্টির বিশাল একটি এলাকাজুড়ে একটি টিউব হতে আশপাশের জঙ্গল ও লোকালয়ে ছড়িয়ে দেয় শরীরে বিশেষ বহন করা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া (‘উলবাচিয়া’) এতে পুরে দেওয়া প্রায় ৮০ হাজার পুরুষ মশা। যাদের টানে কাছে এসে গোটা এলাকার মেয়ে মশারা মিলনের পর পুরোপুরিই বন্ধ্যা হয়ে গেছে।’
গবেষণাগারে নিয়ে গিয়ে ওই পুরুষ মশাগুলির শরীরে ‘উলবাচিয়া’ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি এদের বিশেষ ধরনের একটি টিউব থেকে বের করে তাদের বিষে ভরা মেয়ে মশাদের সঙ্গে ‘যুদ্ধে’ নামানোর আগে লেসার রশ্মি দিয়ে তাদের উপর নজরও রেখেছিলেন ওই বিজ্ঞানীরা প্রতিটি মশার উপর।
বিজ্ঞানীদের দাবি, এই পদ্ধতিতেই সবচেয়ে সহজে এবং সবচেয়ে কম খরচে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বিষে ভরা মশাদের বংশ ধ্বংস করা সম্ভব হবে।