দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একটি নতুন প্রাণ পৃথিবীতে আসা নিঃসন্দেহে একটি আনন্দের সংবাদ। যখন একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হয়, তখন তার পরপরই পরিচিতজনরা মিলিয়ে দেখেন, সে আসলে দেখতে কার মতো হয়েছে। চোখ, নাক, মুখের গড়ন মায়ের মতো নাকি বাবার মতো এই নিয়ে চলে নানা আলোচনা।
আর শিশু যখন বড় হতে শুরু করে, একটু একটু করে বুদ্ধির বিকাশ ঘটতে শুরু করে ঠিক তখন সবাই এমনটা বলে, বাবার মতো মেধাবী হয়েছে বা মায়ের মতো বুদ্ধিমতি হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আসলে শিশু কতোটা বুদ্ধিদীপ্ত হবে তা নির্ভর করে তার মায়ের বুদ্ধিমত্তার ওপরেই। এক্ষেত্রে বাবার বুদ্ধিমত্তা একদমই ভূমিকা রাখে না। তবে এটি মনগড়া কোনো তথ্য নয়, রীতিমতো গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমন তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষণায় গবেষকরা বলেছেন, শিশুর দেহে বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টিকারী জিন মায়ের নিকট হতেই আসে। মানবদেহের ‘এক্স’ ক্রোমোজোমের মধ্যেই থাকে বুদ্ধিমত্তার জিন। ভ্রুণ গঠনের সময় নারীদেহের ‘এক্স’ ও ‘এক্স’ ক্রোমোজোম হতে একটি এবং পুরুষের দেহের ‘এক্স’ এবং ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোম হতে একটি করে মোট দু’টি ক্রোমোজোম নেওয়া হয়। যেহেতু এক্স ক্রোমোজোম নারীদেহে দু’টি করে থাকে এবং পুরুষের মাঝে একটি করে থাকে, সেহেতু বাবার তুলনায় মায়ের কাছ থেকে সন্তানের মাঝে বুদ্ধিমত্তা যাওয়ার সম্ভাবনাই থাকে সবচেয়ে বেশি।
এক্ষেত্রে মায়ের বুদ্ধি পাবার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও বাবার কাছ থেকেও বুদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নতুন গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, উন্নততর যে অবধারণগত বৈশিষ্ট্যগুলো বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানরা পায় তা কাজে লাগে না; মানবদেহ থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেগুলোর কার্যকলাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
‘কন্ডিশনড জিন’ (নামের এক ধরণের বিশেষ অবস্থাভিত্তিক জিনের শ্রেণীও রয়েছে। এর কোনোটা শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে সন্তানের দেহে যোগ হলে সক্রিয় হয়। কোনোটি আবার কাজ করে যদি সেটা বাবার তার কাছ থেকে আসে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, শিশুর বুদ্ধিমত্তার কন্ডিশনড জিনগুলো শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে দেহে এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে। নইলে সেটি নিষ্ক্রিয় থাকে।
গবেষণাগারে জেনেটিক নিয়ন্ত্রণে জন্ম দেওয়া ইঁদুরের ওপর সংশ্লিষ্ট গবেষণা পরিচালিত হয়ে থাকে। তাদের মস্তিষ্ক বড় করার জন্য মায়ের বাড়তি জিন প্রয়োগ করা হয়। আবার তাদের দেহের আকারও ছোট রাখার পরিকল্পনা করা হয়। যে ইঁদুরের মাঝে বাবার বাড়তি জিন দেওয়া হয় তাদের মস্তিষ্ক ছোট আকারে ও দেহ হয় বড় আকারের।
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ইঁদুরের মস্তিষ্কের ৬টি ভিন্ন ভিন্ন অংশে বাবা ও মায়ের জিন কার্যকর হয়ে থাকে। বাবার জিন দেহের লিম্বিক সিস্টেমে কাজ করে। এই অংশটিই সেক্স, খাবার ও আগ্রাসী মানসিকতা তৈরিতে কাজ করে থাকে। বিজ্ঞানীরা সেলেব্রাল কর্টেক্সে বাবার কোনো জিনই খুঁজে পাননি। এই অংশে কগনিটিভ ফাংশনের অধিকাংশটুকু কাজ করে থাকে। কারণ হলো দর্শন, চিন্তাশক্তি, ভাষা ও পরিকল্পনা তৈরির সঙ্গে এর সঙ্গে সংযুক্ত। তবে গবেষণায় এটাও বলা হয় যে, জিনতত্ত্বই মানুষের বুদ্ধিমত্তার একমাত্র নির্ধারক সেটি নয়। বুদ্ধিমত্তার ৪০-৬০ শতাংশই আসে বংশানুক্রমে। পরিবেশ থেকে আসে বাকিটুকু।
মানুষের মাঝেও বিষয়টি যাচাই করতে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডের শহর গ্লাসগোর বিজ্ঞানীরা ১৯৯৪ সাল হতে প্রতি বছর ১৪ হতে ২২ বছর বয়সী ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নিতে থাকেন। এভাবেই মোট ১২ হাজার ৬৮৬ জনের পরীক্ষা নিয়েছেন তারা।
শিক্ষাগত যোগ্যতা, বর্ণ, জাতি, আর্থ-সামাজিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে করা ওই পরীক্ষায় দেখা যায় যে, অংশগ্রহণকারীদের বুদ্ধি তাদের মায়ের বুদ্ধিমত্তা থেকে আসার সম্ভাব্যতাই সবচেয়ে বেশি থাকে। একুশে টেলিভিশন অবলম্বনে।