দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সত্যিই এক আশ্চর্যজনক খবর বটে। এক দেশে নাকি প্রেমে পড়ে গাছকে গণহারে ‘বিয়ে’ করছে তরুণীরা! আসলেও কী তাই? কী এমন রয়েছে গাছে?
সত্যিই বিচিত্র এই পৃথিবী। প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে নানা ধরনের ঘটনা। আর এইসব ঘটনা জন্ম দেয় রহস্যের, আবার কোনও ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় মানুষ। তাই বলে গাছের প্রেমে পড়ে গাছকে বিয়ে করা! এমন কথা আগে কখনও বোধহয় শোনা যায়নি। গাছকে বিয়ে করা তাও আবার গণহারে! অবাক করার মতো এমন অভিনব ঘটনাটি ঘটেছে মেক্সিকোতে।
এই অভিনব বিয়ের কথা শুনে মনে হতে পারে পুরুষের প্রতি প্রেম-প্রীতি, শ্রদ্ধা-বিশ্বাস কিংবা ভালোবাসা বুঝি শেষই হয়ে যাচ্ছে মেক্সিকোর মেয়েদের! তাহলে কী দেশটির ‘বজ্জাত’ পুরুষদের সঙ্গে জীবনের গাঁটছড়া বাঁধতে রাজি নয় তারা?
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, মেক্সিকোর নারীদের গাছকে বিয়ে করার পেছনে রয়েছে দারুণ সব যুক্তি! তাদের ধারণা মতে, এইমব ললনারা এবার নাকি দলে দলে প্রাণ-মন-হৃদয় সঁপে দিচ্ছে এক ‘সদা-নীরব’, উচু-লম্বা এই (গাছ) প্রেমিককে। যে প্রেমিক কথা বলতে পারে না, সব সময় চুপ করে থাকে। যে প্রেমিক কখনও প্রতারণা করে না, ঠকায় না, এমন কী পরকীয়ায় মাতে না, দুর্দিনে ছেড়েও যায় না কাওকে। অথচ অকাতরে ছায়া দিয়ে, মায়া দিয়ে, নির্ভেজাল অক্সিজেন দিয়ে গোটা পৃথিবীকেই আমৃত্যু আপন করে রাখে।
তাই দলে দলে গাছকেই বাহুডোরে-মায়াডোরে বাঁধছে তরুণীরা ঘটা করে। সাধারণ আর দশটা বিয়েতে যেমন প্রাদ্রি-পুরোহিত ডেকে প্রথা এবং ধর্মীয় রীতি মেনে আচার অনুষ্ঠান করা হয়। গাছের সঙ্গে বিয়েতেও তা করা হচ্ছে ঠিক ষোল আনা।
জানা যায়, মূলত, ‘একটা গাছকে ভালোবাসো’ বা ‘ম্যারি আ ট্রি’ নামের এক অভিনব ক্যাম্পেইন শুরু করেছে প্রকৃতিবান্ধব একটি সংগঠন ‘বেদানি’। পৃথিবী বা বসুন্ধরা নামের আমাদের প্রিয় গ্রহকে, এর গাছপালা তরুলতাকে গাছ চোর, তরুঘাতক কাঠ ব্যবসায়ী মাফিয়াচক্রের করাল কুঠারাঘাত হতে বাঁচাতেই ‘বেদানি’ শুরু করে এক বৃক্ষরক্ষা ক্যাম্পেইন। তারা ‘একটা গাছকে বাসো ভালো’, ‘একটা গাছকে বিয়ে করো ’, ‘গাছ নামের প্রেমিক তোমায় কখনও ছেড়ে যাবে না’—এরকম মনকাড়া স্লোগান নিয়ে সুন্দরী ললনাদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছে এই সংগঠন বেদানি। তারা গাছকে বিয়ে করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছে তরুণীদের।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তাতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। শান্ত গাছকেই তারা ঢের যোগ্য প্রেমিক এবং বর হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। গাছের সঙ্গে গণবিয়ের এক হৈহৈ রৈ রৈ কাণ্ড হয়ে গেছে সেদেশে। বেশ ঘটা করে হাজারো মানুষের উপস্থিতিও ঘটছে। মানুষ-কনেদের ও গাছরূপী বরদের গণবিয়ের এই অভিনব আয়োজনে পাদ্রী কিংবা পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন পেরুভীয় অভিনেতা এবং প্রকৃতিবাদী বিচার্ড তোরেস। তবে বিয়ে মানেই তো দুপক্ষের সম্মতির দরকার। তবে গাছ তো আর কথা বলতে পারে না। তাহলে গাছের সম্মতি রয়েছে সেটা জানার উপায় কী? আয়োজকদের ধারণা মতে, ‘মৌনং সম্মতিং লক্ষণম!’ এই বিয়ের ছাড়াছাড়ি, বিচ্ছেদ এসবের জন্য তো আদালতে দৌড়াতে হবে না। তাহলে আর বাধা কোথায়!
যেসব তরুণীরা গাছকে ভালোবেসে বিয়ে করলো, এটা মেক্সিকো ওয়াক্সাকা প্রদেশের সান হাকিন্তো আমিলকান বনভূমিতে নির্বিচার বৃক্ষনিধন এবং অবৈধভাবে গাছ কেটে বন উজাড়েরই এক শিল্পিত প্রতিবাদ এটি। গাছকে ভালোবাসা এবং বিয়ে করার মধ্যদিয়ে মেক্সিকোর সুন্দরী ললনারা চায় গাছকে করাত-কুড়ালের দাতের কামড় হতে বাঁচাতে। গাছকে সবচেয়ে আপন ভেবে আগলে রাখার জন্য তারা বদ্ধ পরিকর। পত্রেপুষ্পে বর্ণেগন্ধে ছায়ায় মায়ায় এক মনোরম পৃথিবীর স্বপ্ন ছড়িয়ে দিতে চান তারা।
এইসব তরুণীরা শপথ করেছে, যতোক্ষণ দেহে রয়েছে প্রাণ, ততোক্ষণ তাদের ‘বরদের গায়ে’ কাওকে কুড়াল বসাতে দেবে না তারা কোনো অবস্থাতেই!