দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আবারও অস্থির ইরাক। ইরাকে চলমান অস্থিরতা ও বিক্ষোভের মুখে সত্যিকার অর্থে কি কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন আসতে চলেছে? নাকি দেশটিতে যে অচলাবস্থা চলছে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফের জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে?
বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো স্পষ্ট বার্তা না পাওয়া গেলেও অনেকের মতে, আইএস জঙ্গিদের উত্থান নতুন করে হলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। আবার কেও কেও বলছেন, ইরাক এখন অভ্যন্তরীণ এবং বহির্বিশ্বের রাজনীতির শিকার।
যদিও বিক্ষোভকারীরা বেকারত্ব দূর, সরকারি পরিষেবা বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আন্দোলনকে পুঁজি করেই একপক্ষ তাদের রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ব্যস্ত। আগের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর তার স্থানে নতুন প্রধানমন্ত্রী আসেনি। অপরদিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন নিয়ে মতবিরোধের জেরে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। সবমিলিয়ে গভীর এক রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি।
গত তিন মাস ধরেই ইরাকে সরকার পতনের জন্য জোরালো আন্দোলন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী বাগদাদ এবং দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে এই আন্দোলন বেশি চাঙ্গা দিয়ে উঠেছে। দেশটিতে যে দুর্নীতির বাসা বেঁধেছে তা উপড়ে ফেলার জন্য রাজপথে নেমেছে সাধারণ জনগণ। সেই সঙ্গে তারা সেখানে ইরানের প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হেচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ৫ শতাধিক মানুষ নিহত এবং ১৯ হাজার মানুষ আহত হয়েছে। পরিস্থিতির নাজুক অবস্থায় তখন প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হন আদেল আব্দুল মাহদি। তবে তিনি সরে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকারে থেকেই যান। তার পদত্যাগের পর এখন পর্যন্ত সেই স্থানে নতুন কোনো প্রধানমন্ত্রীও আসেনি। রাজনৈতিক সংকট দেশটিকে বর্তমানে এমন মারাত্মক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে, ১৬ বছর পূর্বে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পরও এতো মারাত্মক পরিস্থিতি দেখা যায়নি।
বর্তমান অবস্থা এমন দিকে ধাবিত হয়েছে যে কেও এর সুষ্ঠু সমাধানে নিয়ে যেতে পারছেন না। না পারছে তারা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কোনো সমঝোতাতে আসতে, না পারছেন তারা নিজেদের মধ্যেকার বোঝাপড়া ঠিক করতে। পার্লামেন্টও বিক্ষোভকারীদের দাবির সপক্ষে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধেও কোনো জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেনি। এমনকি প্রস্তাবিত নতুন নির্বাচন আইনের বিষয়েও তারা ঐকমত্যে আসতে পারেননি কোনোভাবেই। চলতি সপ্তাহে একটি নতুন প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নে পার্লামেন্টের জন্য সাংবিধানিক সময়সীমা নির্ধারিত করা ছিল। সেখানে একজন গ্রহণযোগ্য প্রধানমন্ত্রী খুঁজে পাওয়ার জন্য সবার চেষ্টাই ছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের জেরে পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ। এ নিয়ে পার্লামেন্টে তিনি তার পদত্যাগপত্র জমাও দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন যে, ‘আল-বান্না’ জোটের পক্ষ হতে যাকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাকে ওই পদে বসানো হলে সংবিধান লঙ্ঘিত হতে পারে। সে কারণেই তিনি এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্টের অন্যান্য সদস্যের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের কারণেই তিনি তার পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। অর্থনৈতিক সংকট এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত অক্টোবর হতে সেখানে আন্দোলন শুরু হয়। শাসকগোষ্ঠী বিষয়টি নিয়ে দমনপীড়নও কম চালাননি।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সিরিয়া এবং ইরাক বিষয়ের সিনিয়র উপদেষ্টা মারিয়া ফানতাপি এই বিষয়ে বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় বিক্ষোভকারী এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্য কাওকে খুঁজে পাওয়া সত্যিই জটিল একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ হলো দুটি বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা তেমন একটা সহজসাধ্য কাজ না।
মেহেদি চেসিন নামে এক বিক্ষোভকারী জানিয়েছেন, নতুন করে কেও প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসলেই সব সমাধান হয়ে যাবে- এমন করে ভাববার কোনো অবকাশই নেই। কারণ হলো তিনিও যে সেই একই পথে হাঁটবেন না তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তাই আমরা চাই যে সবাই পদত্যাগ করুক। নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে দৈনিক ইত্তেফাক।