দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে এক বাংলাদেশি তরুণ নিহত হয়েছেন। নিহত ওই তরুণের নাম উইন রোজারিও (১৯)। তিনি মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন বলে জানা যায়।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৭ মার্চ) দুপুর পৌনে দুইটার দিকে নিউইয়র্কের কুইন্সে তার নিজের বাড়িতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন উইন রোজারিও। ১০ বছর পূর্বে ওই তরুণের পরিবার বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।
নিউইয়র্ক টাইমস এর এক প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ১৯ বছর বয়সী এক তরুণকে নিউইয়র্কে বুধবার তার কুইন্সের বাড়িতে পুলিশ মারাত্মকভাবে গুলি করে হত্যা করে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। নিহত ওই তরুণ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন ও গুলিতে নিহত হওয়ার পূর্বে সাহায্যের জন্য ৯১১ নম্বরে ফোন করেছিলেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন যে, উইন রোজারিও নামে ওই তরুণ এক জোড়া কাঁচি দিয়ে পুলিশ অফিসারদের দিকে তেড়ে যান। এরপরই একপর্যায়ে কর্মকর্তারা তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালান।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, তবে নিহত তরুণের ভাই এই গুলি চালানোর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তিনি ঘটনার পুলিশি বিবরণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তার মা তার ছেলেকে আটকাচ্ছিলেন ও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, পুলিশ অফিসারদের তাদের বন্দুক থেকে গুলি করার দরকারই ছিল না।
পুলিশ গুলি চালানোর পরই উইন রোজারিওকে মৃত ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় সময় (বুধবার) দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওজোন পার্কের ১০৩ তম স্ট্রিটে তার পরিবারের দ্বিতীয় তলার অ্যাপার্টমেন্টে এই ঘটনাটি ঘটে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পুলিশ ডিপার্টমেন্টের টহল প্রধান জন চেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, দু’জন অফিসার মানসিক যন্ত্রণায় থাকা এক ব্যক্তি সম্পর্কে ৯১১ নম্বরে ফোনকলের প্রতিক্রিয়ায় অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর গুলি চালানোর এই ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেছেন যে, সেখানে পরিস্থিতি ‘বেশ উত্তেজনাপূর্ণ, বিশৃঙ্খল ও বিপজ্জনক ছিল। পুলিশ মনে করছে যে, নিহত রোজারিও নিজেই ৯১১ নম্বরে কল করেছিলেন।
চীফ চেল বলেছেন, অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর অফিসাররা রোজারিওকে হেফাজতে নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি একটি ড্রয়ার হতে কাঁচি বের করে অফিসারদের দিকে ধেয়ে আসেন। পরে উভয় অফিসারই রোজারিওর ওপর টেজারের মাধ্যমে গুলি করেন ও তাকে পরাস্ত করা হয়।
জন চেল আরও বলেন, ‘তবে তার মা ছেলেকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। তবে এটি করতে গিয়ে তিনি ঘটনাক্রমে রোজারিওর শরীর থেকে টেজার সরিয়ে দেন। তখন সেই সময় রোজারিও কাঁচি তুলে আবারও অফিসারদের দিকে তেড়ে আসেন।’
জন চেল বলেন, ‘এমন পরিস্থিতেতে আত্মরক্ষা করার জন্য তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনোই উপায় ছিল না।’
অবশ্য রোজারিওকে কতোবার গুলি করা হয়েছে তা অবশ্য বলেননি। যদিও রোজারিওর পরিবার বলেছে, তাকে ৬ বার গুলি করা হয়েছে। এই পুরো ঘটনাটিই পুলিশ অফিসারদের শরীরে লাগানো ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে বলে জানান চেল। যদিও ওই ফুটেজটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে যে, রোজারিওর ১৭ বছর বয়সী ভাই উশতো রোজারিও এক সাক্ষাৎকারে পুলিশি এই বর্ণনার পুরো বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, তার মা এনকাউন্টারের পুরো সময়জুড়েই তার ভাইকে তার কোলে ধরে রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার মা যখন তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, তখনই তারা তাকে টেজার দিয়ে গুলি করে। টেজার দিয়ে গুলি করার পরও আমার ভাই নিচে পড়ে যাননি। তাই একজন পুলিশ বন্দুক বের করে তাকে গুলি করে ও সেই সময়ও আমার মা তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলেন।’
তিনি বলেন, এভাবে গুলি করা একেবারেই ছিল অপ্রয়োজনীয়। উশতো রোজারিও বলেন, ‘প্রথমত: তার বিরুদ্ধে দু’জন পুলিশ অফিসার সেখানে ছিলেন। আমার মা আগে থেকেই তাকে ধরে রেখেছিলেন, আর তাই তিনি সত্যিই কিছু করতে পারতেন না।’
তিনি আরও বলেছেন: ‘আমি মনে করি না কেবল একটি কাঁচি দু’জন পুলিশ অফিসারের জন্য হুমকি ছিল।’
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে যে, নিউইয়র্কে গত দুই মাসে পুলিশের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন এই রোজারিও।
উশতো ও উইনের বাবা ফ্রান্সিস রোজারিও বলেছেন, তাদের পরিবার ১০ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্কে অভিবাসী হন এবং উইনের স্বপ্ন ছিল মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান। তবে গ্রিন কার্ড পেতে বিলম্বের কারণে তার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছিলো।
উশতো রোজারিও বলেছেন, তার ভাই দুই বছর পূর্বে ওজোন পার্কের জন অ্যাডামস হাই স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন ও সম্প্রতি তিনি বিষণ্ণতার মধ্যে ছিলেন।
তার বাবা জানিয়েছেন, উইন রোজারিও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে গত বছর স্বল্প সময়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তিও হয়েছিলেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org