দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণা এখন তুঙ্গে। এমন সময় বিশ্বের নির্বাচন নিয়ে উদ্ভট সব হাস্যকর কাহিনী রয়েছে আপনাদের জন্য।
নির্বাচন মানেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, মিছিল, মাইকিং, নির্বাচন কমিশনের ব্যস্ততা ইত্যাদি। নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বটে। এর কারণ হলো মানুষ তাদের নেতা বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে এই নির্বাচনের মাধ্যমে। যিনি নেতৃত্ব দেবেন ভবিষ্যতে।
এই নির্বাচন নিয়ে পৃথিবীর দেশে দেশে ঘটেছে নানা ধরনের ঘটনা। নির্বাচনের ইতিহাসের ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনা আজকের এই প্রতিবেদনে। এসব নির্বাচন বিষয়গুলো আপনাকে বাকরুদ্ধ করে দেবে। তাহলে আসুন নির্বাচনের মজার কিছু কাহিনী জেনে নেওয়া যাক।
পায়ে লাগানোর পাউডার ও এক নেতা
পিকোয়াজা, ইকুয়েডর। ১৯৬৭ সালের কথা। অত্যন্ত অদ্ভুতভাবে সেখানকার অধিবাসীরা একটি বিশেষ ব্র্যান্ডের ফুট পাউডার যাকে বলে পায়ে লাগানোর পাউডারকে নির্বাচনে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। এই ঘটনাটি ঘটে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে একটি প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান (Pulvapies) নামে একটি পাউডারের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।
তারা বিজ্ঞাপনে লিখেছিল, ‘আসন্ন নির্বাচনে যেকোনো প্রার্থীকে ভোট দিন। কিন্তু যদি আপনি ভালো এবং পরিচ্ছন্ন থাকতে চান, তাহলে Pulvapies কে ভোট দিন।’ প্রতিষ্ঠানটি নিজেরাই ভাবেনি যে, স্থানীয় জনসাধারণ এটাকে এতো গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। ভোটের দিন সন্ধ্যায় সেই প্রতিষ্ঠান লিফলেট বিতরণ করলো যাতে লেখা ছিল ‘For Mayor: Honorable Pulvapies’। ভোটাররা তাদের সিল মেরে ব্যালট বক্সে ফেলে দিল। নির্বাচিত হলো সেই পায়ে লাগানোর পাউডার! ন্যাশনাল ইলেক্টোরাল ট্রাইব্যুনাল বেশ বিপদে পড়ে গেলো এবং পরাজিত প্রার্থীরা ওই পাউডার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিলো।
মৃত ব্যক্তি নির্বাচিত!
দেশে দেশে নির্বাচন ভালো মানুষ বা গুণি অথবা যাকে দিয়ে এলাকার কাজ হবে এমন মানুষকে বেছে নেন। নির্বাচিতও করেন সেসব মানুষকে। কিন্তু কখনও নিশ্চয়ই এরকম হয় না যে কেও কোনো মৃত মানুষকে নির্বাচিত করেছে।
কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এরকম ঘটনাও কিন্তু ঘটেছে। ২০০৯ সালে আমেরিকার ফ্লোরিডা ও আলাবামাতে নির্বাচনা প্রচারণাতে জয়ী হন যথাক্রমে আর্ল উড (৯৬) ও চার্লস বিসলে (৭৭)- যারা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগেই মারা যান। উডের পরিকল্পনা ছিল, অরেঞ্জ কাউন্টির ট্যাক্স কালেক্টর হওয়া। ৫৬% ভোট পেয়ে উড সেবার নির্বাচিত হন।
আবার অ্যালাবামাতে চার্লস নির্বাচিত হন ৫২% ভোট পেয়ে! এছাড়া জেরি ওরোপেজা ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটে নির্বাচিত হওয়ার জন্য লড়ে যাওয়ার সময় নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার মৃত্যু হয়। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ পাননি। মৃত জেরিও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
এক ব্যক্তি দুর্ঘটনাক্রমে নির্বাচিত হয়েছিলেন
ইতালির একটি ছোট গ্রামেরই একজন অধিবাসী ফ্যাবিও বোরসাত্তি। তিনি একেবারেই রাজনীতিবিমুখ মানুষ। তার এক বন্ধু স্থানীয় নির্বাচনে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে দাঁড়ান। কিন্তু একজন মাত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচন বাতিলের সম্ভাবনা দেখা দিলো, ফ্যাবিওর বন্ধু তাকে বললো নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য। ফ্যাবিও কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু বন্ধুকে সাহায্য করতে তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে দাঁড়ালেন। তার ধারণা ছিল এতে তার বন্ধু সহজেই নির্বাচিত হতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্য লিখে রেখেছিল হয়তো অন্য কিছু। ফ্যাবিওর নিজের পরিবারের সদস্যরা পর্যন্ত তাকে ভোট দেননি, তবুও ফ্যাবিও ৫৮% ভোট পেয়ে নির্বাচিত হলেন। আর তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী, সেই বন্ধুটি হলেন পরাজিত!
ফ্যাবিও প্রথমে সরে যেতে চাইলেও জনমতের ব্যাপক বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত নিজের নির্বাচিত পদে বহাল থেকে যান। কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম দিকে তার কিছুটা সমস্যা হলেও পরে নিজেকে পুরোপুরি গুছিয়ে নেন।
শহরের মেয়র নির্বাচিত হলো বিড়াল
আলাস্কার টালকিটনা শহর বিগত ১৫ বছর যাবত একটি বিড়াল মেয়রের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ঘটনার সূত্রপাত তখন, যখন শহরের অধিবাসীরা ‘স্টাবস’ নামে এই বিড়ালের পক্ষে প্রচারণা করেছিল। কারণ তাদের মতে, মানুষের চেয়ে বিড়াল জনপ্রতিনিধি হিসেবে অনেক ভালো হবে।
ওই দেশের জনগণ স্টাবসকে নিয়ে অনেক খুশি। এর কারণ, সে অযথা কর আরোপ করে না, ব্যবসা-বাণিজ্যে হস্তক্ষেপ করে না ও সৎও। প্রতিদিন ৪০ জনের মত লোক স্টাবসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। স্টাবসের নিজের ফেসবুক ফ্যান পেজও রয়েছে যাতে সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ হাজার।