দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সকলেই জানি গাড়ির জন্য ব্যাটারির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, অর্থাৎ ব্যাটারি ছাড়া গাড়ি চলে না। তবে এবার এমন এক গাড়ি আবিষ্কার করা হয়েছে যে গাড়ি চলবে ব্যাটারি ছাড়াই!
আমরা সকলেই জানি, যে কোনো গাড়ি চলতে ব্যাটারির প্রয়োজন পড়ে। গাড়ি স্টার্ট করার জন্য ব্যাটারি অত্যাবশ্যক। গাড়িতে থাকা সেলফকে ১৫/৩০ সেকেন্ড চালু রাখলে তখন ইঞ্জিন স্টার্ট নেয়। সেজন্য খুব অল্প সময়ের জন্য যে ২৫-১৫০ অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট প্রবাহের প্রয়োজন পড়ে, তার জোগান দিতে হয় ব্যাটারিকেই। তাই বলা যায় যে, ব্যাটারি প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের বৈদ্যুতিক জলাধার। তবে এবার বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের প্রযুক্তির কথা ভাবছেন যা নাকি গাড়িতে আলাদাভাবে ব্যাটারি রাখার কোনো প্রয়োজন-ই হবে না। অর্থাৎ ব্যাটারি ছাড়াই তৈরি হবে গাড়ি।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ব্যাটারিবিহীন এই গাড়ির স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যিনি সেই বিজ্ঞানীর নাম লেইফ অ্যাসপি। সুইডেনের চ্যালমারস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড ম্যাটারিয়াল সাইন্স বিভাগের অধ্যাপক লেইফ অ্যাসপি কম্পোজিট যন্ত্রাংশের ওজন কমানোর বিভিন্ন কলাকৌশল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করে আসছেন। এই বিজ্ঞানী এমন এক ধরনের গাড়ি তৈরির কথা ভাবছেন যেখানে ব্যাটারির জন্য গাড়িতে পৃথকভাবে কোনো স্থান দরকার হবে না, গাড়ির কাঠামোই মূলত কাজ করবে ব্যাটারি হিসেবে। এতে করে গাড়ির ওজনও কমে আসবে আগের থেকে। একটা সময় গাড়ির ওজন কমানোর জন্য ও গাড়ির বাহ্যিক কাঠামো আরও মজবুত করার জন্য কার্বন ফাইবার ব্যবহারের কথা ভেবেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তবে এই কার্বন ফাইবারকে দিয়ে এখন গাড়ির কাঠামো তৈরির পাশাপাশি ব্যাটারির কাজও চালিয়ে নিতে চাইছেন লেইফ অ্যাসপি’র গবেষকরা। মূলত এই বিষয়টিই লেইফ অ্যাসপির গবেষণার মুখ্য বিষয় ছিলো। এটি সম্ভব হলে শুধু গাড়িই নয় উড়োজাহাজের কাঠামো তৈরির পাশাপাশি ব্যাটারির কাজে ব্যবহার করা যাবে কার্বন ফাইবারকেও।
লেইফ অ্যাসপির ধারণা মতে, সাধারণভাবে গাড়িগুলোতে ব্যাটারি মূলত পরজীবির মতোই কাজ করে। নিজের থাকার জন্য আলাদা কোনো জায়গা নেয়, নিজের ওজন চাপিয়ে দেয় গাড়ির ওপর। কমিয়ে দেয় গাড়ির কর্মক্ষমতাকে। এইসব কারণেই তিনি এমন এক ধরনের গাড়ি তৈরির কথা ভেবেছেন যেখানে পৃথকভাবে কোনো ব্যাটারি রাখার প্রয়োজন পড়বে না, উল্টো গাড়ির বাহ্যিক কাঠামোতে ব্যাটারির কাজ করবে। তাছাড়া লেইফ অ্যাসপি যে ধরনের ব্যাটারিবিহীন গাড়ি তৈরি করার স্বপ্ন দেখছেন তার ওজন ইলেকট্রিক গাড়ির চেয়ে শতকরা ৫০ ভাগ কম হবে।
লেইফ অ্যাসপির গবেষণা দলটি অবশ্য স্বীকার করে বলেছেন যে, কার্বন ফাইবার হতে ইলেট্রোকেমিক্যাল উপাদান থাকার বিষয়টি তাদের পূর্বেই মার্কিন বিজ্ঞানীরা আবিষ্কারে করে ফেলেছেন। এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার জন্য তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের কাছে এই সংক্রান্ত পেটেন্টের জন্য আবেদনও করেছেন। যদিও এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি।
গবেষণা দলটি বলেছে, সব কার্বন একভাবে তৈরি হয় না। কার্বনের বিভিন্নতার কারণে এর বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারের কথা চিন্তা-ভাবছেন তারা। তারা বর্তমানে খুঁজে বের করে দেখতে চান যে, কোন কার্বনের ভূমিকা কেমন ও কোন কার্বনকে কোন কাজে লাগানো সম্ভব। যেসব কার্বন শক্তির ভালো উত্স হিসেবে কাজ করবে সেগুলো দিয়েই মূলত তৈরি করতে চান এই গাড়ির কাঠামো।