দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবার মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের খেতাব হারালেন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি’কে দেওয়া তাদের সর্বোচ্চ সম্মাননাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। খবর বিবিসি’র।
সংস্থাটির পক্ষ হতে গতকাল (সোমবার) এক ঘোষণায় বলেছে, সু চি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান হতে ‘লজ্জাজনকভাবে’ সরে যাওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর সেখান থেকে নতুন করে আরও ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আসার ঘটনায় এর আগেও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা মিস সু চি’কে দেওয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নেয়। সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে মিয়ানমারের এই নেত্রী সু চি’র বিরুদ্ধে।
যাদের মধ্যে রয়েছে, কানাডার পার্লামেন্ট কর্তৃক দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেওয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেওয়া ফ্রিডম অফ সিটি খেতাবসহ আরও অনেকগুলো সম্মাননা। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো লন্ডন-ভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা- অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
ইতিপূর্বে জাতিসংঘও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমান সেনাবাহিনীর অভিযানকে মানবতা-বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা বলে উল্লেখ করে এবং এই অপরাধের দায়ে দেশটির শীর্ষস্থানীয় জেনারেলদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান জানায়।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে মিয়ানমার নেত্রী অং সান সু চি’কে ‘অ্যাম্বাসাডর অফ কনশেন্স’ বা ‘বিবেকের দূত’ খেতাব দিয়েছিল অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সু চি গৃহবন্দী থাকার সময় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার রক্ষায় অং সান সু চি’র শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। সেই সম্মাননাটি এখন প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে অং সান সু চি’কে এই খবরটি পৌঁছে দিয়েছেন।
চিঠিতে লিখেছেন, ‘৮ বছর পূর্বে গৃহবন্দী থাকা নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন উদাসীন।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘সংস্থার একজন দূত হিসেবে সু চি’র নিকট প্রত্যাশা ছিল, শুধু মিয়ানমারের ভেতরেই নয়, পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কর্তৃত্ব এবং ভূমিকা রাখবেন।’
সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু লিখেছেন, ‘তবে আমরা গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত। কারণ হলো আপনি এখন আর আশা, সাহস ও মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাইা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে দেওয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স’ সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোনও রকম যৌক্তিকতা খুঁজেই পাচ্ছে না’।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, অং সান সু চি’র নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর হতে তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত।
রোহিঙ্গাদের ওপর অভিযানের কথা উল্লেখ করে মানবাধিকার এই সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজার হাজার মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী এবং শিশু। আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর কেওই। রাখাইন রাজ্যের শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে অং সান সু চি এবং তার দফতর তাদেরকে মূলত রক্ষা করেছেন। সংস্থাটি বলছে যে, রোহিঙ্গাদের পক্ষে অং সান সু চির দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ ছিলো।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘ভয়ঙ্কর নিপীড়ন ও নির্যাতনের এইসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে বা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখ লাখ রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা একেবারেই ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে স্বয়ং রাষ্ট্রযন্ত্র।’
এই মাবাধিকার সংস্থাটি আরও বলেছে, সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইন তৈরি এবং সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে। তবে অং সান সু চি’র সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু’বছরের মাথায় মানবাধিকার কর্মী, শান্তিকর্মী এবং সাংবাদিকদের হুমকি-ধামকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে যে, অং সান সু চি সাহায্য করুণ বা নাই করুন, মিয়ানমারে বিচার এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে তারা তাদের লড়াই সব সময় অব্যাহত রাখবে।