দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাগরে প্লাস্টিকের দুষণ নিয়ে চিন্তিত সবাই। যে কারণে সমুদ্রের প্রাণী যেমন মৎস্য সম্পদ নিয়েও আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই এবার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, মহাশূন্য থেকেই হবে সমুদ্রের প্লাস্টিক শনাক্ত!
বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন মহাশূন্য হতে সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য খুঁজে বের করার কৌশল বের করতে। বিশেষ করে বর্জ্য বা ধ্বংসপ্রাপ্ত টুকরোগুলো ন্যূনতম বস্তুর আকারের তুলনায়ও অনেক ছোট, তবে সেটি উপগ্রহের মাধ্যমে খুঁজে বের করা খুবই চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়।
তবে পদ্ধতিটি কাজ করে প্লাস্টিক হতে পানিতে প্রতিফলিত আলোর সূত্র সন্ধান করে। যুক্তরাজ্যের প্লাইমাউথ মেরিন ল্যাবরেটরিতে এই সংক্রান্ত পরীক্ষার ফল খু্বই আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।
‘আপনি সমুদ্রে পানিতে ভাসমান একটি পৃথক প্লাস্টিকের বোতল হয়তো দেখতে পারবেন না, তবে আমরা এই উপাদানের একত্রিতকরণকে শনাক্ত করতে পারি,’ বিবিসিকে এতথ্য দিয়েছেন ড. লরেন বিয়ারম্যান।
২০১৫ এবং ২০১৭ সালে ইইউ`এর সেনটিল-টু উপগ্রহের কক্ষপথে স্থাপন করা হয় মাল্টি স্পেকট্রাল ইন্সট্রুমেন্টস বা যাকে বলা হয় এসএসআই নামের দুটি যন্ত্র। এটি পরিচালনা করছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, এটি দিয়ে কাজ করছেন পৃথিবী পর্যবেক্ষণরত বিজ্ঞানীরা।
এই মিশনের প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল ভূ-পৃষ্ঠের একটি ক্রমবর্ধমান মানচিত্র তৈরি করা। তবে এই প্রক্রিয়া উপকূলীয় অংশের পানির দৃশ্যও ধারণ করতে পারে।
এটির মাধ্যমেই মহাসাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য শনাক্ত করার একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেনোনা প্রতিবছরে অন্তত ৮ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক নদী বা অন্যসব উৎসের মাধ্যমে সমুদ্রে আসছে। এটি দুই সেনটিল উপগ্রহের মাধ্যমে প্রতি দুই দিন অন্তর অন্তর যুক্তরাজ্যের অংশটির ম্যাপিং করবে।
ড. বিয়ারম্যানের ধারণা মতে, স্যাটেলাইটের ক্যামেরার রেজুলেশন ১০মিটার, এর কঠিন দিকটি হলো যে, এই ক্যামেরায় শুধু সেসব বস্তুর ছবিই ধরা পড়বে যার একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পিক্সেল তৈরি করতে সক্ষম। তবে কিছু কিছু বিষয় তার পক্ষে কাজ করেছে।
একটি হলো নদীতে ভাসমান বর্জ্য কিংবা ধ্বংসাবশেষ যেগুলো ভেসে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে তার বেশিরভাগই থাকে উদ্ভিদ, সেগুলোতে আসলে প্লাস্টিকের মতো আবর্জনাও থাকতে পারে। আরেকটি যে বিষয়ের সুবিধা সম্পর্কে ড. বিয়ারম্যান বলছেন তা হলো সেন্টিনেল উপগ্রহের ডিটেক্টরের বিশেষ গুণ।
ভিন্ন ভিন্ন আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বোঝার ক্ষমতা রয়েছে এই যন্ত্রগুলোতে। যে কারণে প্লাইমাউথ বিজ্ঞানীরা ক্যামেরায় তোলা চিত্রের পিক্সেলও বিশ্লেষণ করতে পারবেন।
সমুদ্রের পানি নিকটবর্তী ইনফ্রারেড রশ্মি জোরালোভাবে শোষণ করে। উদ্ভিদ ও পানিতে ভাসমান অন্যকিছু এই নিকটবর্তী ইনফ্রারেড রশ্মি প্রতিফলিত করে। তবে উদ্ভিদে প্লাস্টিক মিশে থাকলে তার কিছু পরিবর্তনও দেখা যাবে।
এই উদ্ভিদ ও প্লাস্টিকের ইনফ্রারেড প্রতিফলের ভিন্নতাই তাদের শনাক্ত করার অন্যতম উপায় হিসেবে দেখছেন ড. বিয়ারম্যান।
ড. বিয়ারম্যান বলেন, যে ভাসমান বস্তুর ছবি সংগ্রহ করে তার পিক্সেল বিশ্লেষণ করেই বলা সম্ভব তাতে উদ্ভিদ উপাদান কিংবা প্লাস্টিক উপাদান কেমন রয়েছে। উপগ্রহ হতে তোলা ছবির বর্ণালী বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বস্তুর একটি সূচিও তৈরি করা হয়।
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এবং স্কটল্যান্ডের পূর্ব উপকূলে চালানো একই ধরনের পরীক্ষাও আশার সঞ্চার করেছে। ড. বিয়ারম্যানের ধারণা মতে, এই পদ্ধতিটির আরও পরিমার্জন প্রয়োজন। তবে এই প্রাথমিক পরীক্ষার ফল আরও পরীক্ষার তাগিদ দিয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
পরবর্তীতে ছবিগুলো বিশ্লেষণের জন্যে অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হবে। কেনোনা ধরে ধরে অনুসন্ধান সময়সাপেক্ষ এবং বাস্তব সম্মত নয়। কারণ অটোমেশনই এর একমাত্র পথ।
বিবিসি’র এক তথ্যে বল হয়, ড. বিয়ারম্যান প্লাস্টিক বর্জ্য বেশি পরিমাণে নি:সরণ হয় এমন সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। দূষণের প্রভাব মূল্যায়ন করতে তথ্যগুলো ডেটাবেজের সঙ্গে যুক্তও করছেন তিনি।