দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এই প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত করে দেখার জন্য তহবিল বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ।
সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর গ্রেফতার, নির্যাতন, ধর্ষণ, হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশটির বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাবও গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উত্তেজনা প্রশমনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহবানও জানানো হয় ওই প্রস্তাবটিতে। গতকাল (২৮ ডিসেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাত দিয়ে বিবিসি এই তথ্য দিয়েছে।
জাতিসংঘের ৩ শত ৭ কোটি ডলারের এই তদন্ত তহবিলে প্রথমবারের মতো সিরিয়া এবং মিয়ানমারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গতকাল শুক্রবার আনা নিন্দা প্রস্তাবে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে পক্ষে ভোট দেয় ১৩৪টি এবং বিপক্ষে ৯টি দেশ ভোট প্রদান করে। প্রস্তাবটিতে ভোটদানে বিরত থেকেছে ২৮টি দেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত কোনো প্রস্তাব দেশটি মানতে বাধ্য না হলেও বিশ্ব মতামতের ক্ষেত্রে এই ধরণের প্রস্তাবের প্রভাব রয়েছে। তবে মিয়ানমারের দাবি হলো, উগ্রবাদীদের দমন করতেই তাদের এসব অভিযান চালানো হয়েছিলো।
উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। সেই শুনানিতে হাজিরা দিয়েছেন দেশটির নেত্রী অং সান সু চি। মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতন হওয়ার তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে নিন্দা প্রস্তাবে। সেই সব ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইনে চরম অপরাধ বলে মিশনটি বর্ণনা করে।
এদিকে এই প্রস্তাব অনুমোদনের পর জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত হাও দো সুয়ান এটিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের নামে আরেকটি বৈষম্যমূলক এবং বিশেষভাবে বাছাই করার দ্বৈত আচরণ’ বলে বর্ণনা করেন। যার মাধ্যমে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রস্তাবটি রাখাইন রাজ্যে জটিল পরিস্থিতি সমাধানে কোনো ভূমিকা রাখবে না বলেও মনে করেন তিনি।
এই প্রস্তাবটিতে সেখানে ‘অবিশ্বাসের বীজ বপন’ করবে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটি ওই অঞ্চলে নানা সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও মেরুকরণ তৈরি করবে।’
এদিকে জাতিসংঘের ওই প্রস্তাবে চার দশক ধরে প্রতিবেশী বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার ব্যাপারে সতর্কবার্তাও তুলে ধরা হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর দমন পীড়নের অভিযান চালানোর পর হতেই এসেছে সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ থেকে কয়েক বার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও মিয়ানমারে নিরাপদ পরিবেশের অভাবে দেশে ফিরতে রাজি নন বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গারা।