দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনা ভাইরাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক লাখ মানুষ মারা যাবে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. টনি ফৌসি।
আমেরিকান জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেছেন যে, এজন্য আপনাদের এখনই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। গতকাল (মঙ্গলবার) হোয়াইট হাউসে করোনা ভাইরাস বিষয়ক এক ব্রিফিংয়ে দেশটিতে করোনায় সম্ভাব্য মৃতের একটি চিত্র তুলে ধরে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন ওই শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. টনি ফৌসি।
ড. টনি ফৌসি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিসেসের (এনআইএআইডি) পরিচালক। তিনি আরও বলেন, ‘উত্তর হলো হ্যাঁ-(করোনায়) মৃতের সংখ্যা অত্যন্ত সংবেদনশীল ও আমাদের সেজন্য সেভাবেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
ড. ফৌসি আরও বলেছেন, ‘আসলে কি এতো সংখ্যক লোক মারা যাবে? আমি মনে করি, না এবং আমরা যতো প্রশাসনের ব্যবস্থা নেবো ততো সংখ্যা কমে আসবে। তবে বাস্তবতা স্বীকার করে আমাদের এই ভেবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত যে, আসলে এটা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে এবং যা আমাদের নিজের চোখেই দেখতে হবে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন অন্তত অন্তত ৭৭০ জন। এ পর্যন্ত এটিই দেশটিতে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড।
মৃত্যু সংখ্যাতেও চীনকে ছাড়িয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সিএনএন হেলথের হিসাব মতে, দেশটিতে বর্তমানে মোট মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৭৭৪ জন। এর বিপরীতে চীনে মারা গেছে মোট ৩ হাজার ৩০৫ জন। এছাড়াও দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌনে ২ লাখ।
হোয়াইট হাউস আশঙ্কা করছে যে, যদিও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরার নীতি অনুসরণ করা হয়ে আসছে, তারপরও মারা যাবে এক হতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
মৃতের এই সম্ভাব্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শও দিয়েছেন ড. ফৌসি।
এই পরিচালক আরও বলেন, ‘যখন আপনি একটি ফলাফলের (যা কিছু ঘটবে) সম্মুখীন তখন এস্কেলেটর বা ব্রেক হতে পা সরিয়ে নেওয়ার সময় নয়, তখন আপনার যা করণীয় তা হলো এস্কেলেটরে পা দিয়ে নিচের দিকে আরও চেপে ধরা।’
তবে করোনা মোকাবিলায় আমরা ১৫ দিনের যে গাইডলাইন পেয়েছি তাতে আমরা অবশ্যই ফল পাবো। এই ধরনের পদক্ষেপ সম্ভাব্য দ্বিতীয় ধাক্কার অসুস্থতায় ক্ষয়ক্ষতি প্রশমনে সাহায্য করবে’-বিষয়টি যোগ করেন ড. টনি ফৌসি।
ড. টনি ফৌসির এই পূর্বাভাসকে ‘সংবেদনশীল’ বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্র্রাম্প ও কীভাবে এর গতি থামানো যায় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে, নাগরিকদের জন্য আগামী ৩০ দিনের গাইডলাইন ইস্যু করা হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এই বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, ‘আগামী ৩০ দিনের জন্য গাইডলাইন মেনে চলা আমেরিকান জনগণের জন্য আসলেই ক্রিটিক্যাল একটি বিষয়। তবে সোজা সাপটা বলতে গেলে, এর সঙ্গে জীবন এবং মৃত্যুর বিষয়টি জড়িত।’
‘আমি আশা করি, প্রত্যক আমেরিকান নাগরিক কঠিন দিনগুলোর জন্য যা তাদের সামনে আসছে, তার জন্য প্রস্তুতিও নেবেন। আমাদের আগামী কয়েক সপ্তাহ খুব কঠিন সময় পার করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা যে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তা সংখ্যায় আমাদের অনেক…আমরা আসলে একটি টানেলের শেষ দেখতে যাচ্ছি এবং এটি খুবই বেদনাদায়ক, খুব খুব বেদনাদায়ক আগামী দুই সপ্তাহ’-বিষয়টি ঠিক এভাবেই যোগ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ওয়ার্ল্ডওমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, আক্রান্তের দিক হতে ইতালি, স্পেন ও চীনকে ছাড়িয়ে গেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে এই পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩০ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।