দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিল্কী হত্যাকাণ্ডে তার বডিগার্ড মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী তারেকের কথিত বান্ধবী ফাহিমা ইসলাম লোপা জবানবন্দীতে বলেছেন, তারেক নিজেই যে মিল্কীকে খুন করবেন এটা তিনি ভাবতেও পারেননি।
মিল্কী হত্যাকাণ্ডে তার বডিগার্ড মারুফ রেজা সাগরের স্ত্রী ফাহিমা ইসলাম লোপা নিজেকে জড়িয়ে গতকাল সোমবার ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
জবানবন্দি মতে, লোপাকে যুবলীগ (দক্ষিণ) যুগ্ম সম্পাদক এসএম জাহিদ সিদ্দিক তারেক বলেছিলেন, বিএনপির তিনজন শীর্ষস্থানীয় নেতা তার নিকটতম আত্মীয়। সরকার পরিবর্তন হলেও তার আধিপত্য অটুট থাকবে। তাই মিল্কীকে হত্যা করার পর এই সরকার না থাকলেও তার কিছুই হবে না। তিনি লোপাকে বলেন তার ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। গতকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার আদনানের আদালতে লোপাকে হাজির করা হলে তিনি উক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের খাস কামরায় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে তিন ঘন্টা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এরপর তাকে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
লোপা জবানবন্দিতে বলেন, তারেক বলেছিলেন মিল্কীকে তিনি অন্য কিলার ভাড়া করে খুন করাবেন, নিজে সরাসরি হত্যা করবেন না। তিনি আরো বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি-পায়জামা ও টুপি পরিহিত অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তারেক সেদিন মিল্কী কাকাকে গুলি করছেন। এভাবে গুলি করে হত্যা করবেন তা ভাবতেও পারিনি।’ পাঞ্জাবি-পায়জামা ও টুপি পরিহিত ব্যক্তিটি তারেক বলে লোপা জবানবন্দিতে সনাক্ত করেন। লোপাকে নিয়ে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে গিয়ে মিল্কীকে হত্যার পরিকল্পনার কথা প্রায়ই বলতেন তারেক। সর্বশেষ উভয়ে খুন করার বিষয়ে একমত হলে তারেককে লোপা বলেন, মিল্কী হত্যাকাণ্ডের পর তোমার কিছু হলে আমি শেষ। লোপাকে অভয় দিয়ে তারেক বিএনপির শীর্ষ তিন নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা শোনাতেন। তিনি বলতেন, এক নেতার পরিবারের সঙ্গে তার ব্যবসা রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলে তো নয়ই, এমনকি সরকার পরিবর্তন হলেও কেও তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। লোপার কোন ধরনের আর্থিক সমস্যা হবে না বলে তাকে আশ্বাস দিতেন। সাগরকে ছেড়ে লোপা যদি প্রয়োজনে চলেও আসেন তবে তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সুন্দরভাবে রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারেকের এই মনভোলানো কথায় লোপা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। গত এক বছর ধরে তারেকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক চলে আসছিল বলে জবানবন্দিতে লোপা উল্লেখ করেছে।
সংবাদ মাধ্যম সূত্র বলেছে, মতিঝিল এজিবি কলোনী ও আশেপাশের এলাকার আধিপত্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদা আদায়, দখলবাজি এবং দলের কর্তৃত্ব নিয়ে মিল্কী ও তারেকের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয়। গত দুই বছর ধরে এ দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সর্বশেষ উভয়েই ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হবার প্রত্যাশায় ছিলেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও চরম আকার ধারণ করে। গত এক বছর ধরে উভয়ে একে অপরকে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। অতি সম্প্রতি শ্যাওড়াপাড়া এলাকার এক কিলারকে মিল্কী দায়িত্ব দেন তারেককে হত্যা করার। বিষয়টি ঐ কিলার সরাসরি তারেককে বলে দেয়। এ ঘটনার পর তারেক বলেন, মিল্কীকে আর একদিনও বাঁচিয়ে রাখা যাবে না। লোপার স্বামী সাগর মিল্কীর অনুগত এবং মিল্কীকে হত্যা করার ক্ষেত্রে তার কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পাবার আশা ছিল না তারেকের। এ কারণে সাগরের স্ত্রী লোপার সঙ্গে অতি কৌশলে তারেক প্রেমের সম্পর্কে জড়ান।
২০০৬ সালে কলকাতায় লোপার সঙ্গে তারেকের প্রথম দেখা হয়। এরপর থেকে তারেক লোপার পিছু ছাড়েনি। এক বছর পূর্বে তারেক লোপার সঙ্গে প্রেমে জড়াতে সক্ষম হন। সাগরও সংসারে সময় দেয়না গত দুই বছর ধরে। কেবল কিছু সময়ের জন্য রাতে ঘুমাতে আসতো সে। বেশিরভাগ সময় নিহত মিল্কীর সঙ্গে থাকতেন। জানা গেছে, ২০১০ সালে মতিঝিল এলাকায় সাগরের পানির ব্যবসা বন্ধ করে দেন তারেক। মিল্কী এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। ব্যবসা বন্ধের পর আর্থিক সংকটে পড়ে সাগর লোপার সংসার। এ সকল বিষয় নিয়ে মিল্কীর উপর চরম ক্ষুব্ধ ছিল লোপা। আর আই মিল্কীকে হত্যার ব্যাপারে তারেককে সহযোগিতা করার হাত বাড়িয়ে দেয় লোপা। এক মাস আগ থেকে তারেক লোপার সঙ্গে নানা বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। লোপার দায়িত্ব ছিল, স্বামী সাগরকে ফোন করে মিল্কীর অবস্থান জানানো। দুই দফা উদ্দেশ্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর গোলাম আযমের রায়ের দিন ১৫ জুলাই তারেক মিল্কীকে হত্যা করার প্রস্তুতি নেয়। ওই দিনও তারা ব্যর্থ হয়। লোপা মিল্কীর অবস্থান সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।
লোপা তার জবানবন্দীতে আরও বলেছে, ৪র্থ দফায় গত ২৯ জুলাই রাত ১টায় গুলশান সপার্স ওয়ার্ল্ডের প্রবেশ গেটে মিল্কী পাঞ্জাবী, পায়জামা ও টুপি পরিহিত অবস্থায় গুলি করে মিল্কীকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। ওইদিন লোপা সকাল থেকে তার স্বামী সাগরকে কয়েক দফা ফোন করে মিল্কীর সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানায়। ওই দিন তারও অবস্থান নিশ্চিত করতে কোন ভুল হয়নি বলে লোপা জবানবন্দীতে উল্লেখ করে।