দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রতিদিন জীবনে নানা অনিয়মের কারণে হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি হার্ট ফেলিওরের সংখ্যাও আজকাল বাড়ছে। বেশ কিছু উপসর্গ দেখে হার্ট ফেলিওরের বিষয়ে সতর্ক হওয়া যাবে।
হার্ট ফেলিওর বিষয়টিকে অনেকেই বোঝেন হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া। অনেকের ধারণা যে, হার্ট অ্যাটাক ও হার্ট ফেলিওর বিষয়টি ‘এক’। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞান অনুযায়ী জানা যায়, এই দু’টি সমস্যা সম্পুর্ণই পৃথক একটি বিষয়। বিভিন্ন কারণে হৃদযন্ত্রের পেশি দুর্বল হয়ে গিয়ে পাম্প করার ক্ষমতাও কমে যায় অনেক সময়। যে কারণে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়, অক্সিজেনের ঘাটতিতে শুরু হয় বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা। এটিই হার্ট ফেলিওর। চিকিৎসকরা হার্ট ফেলিওরকে ‘অসুখ’ না বলে, তারা বলেন ‘সিনড্রোম’। অপরদিকে হার্ট অ্যাটাক বিষয়টি অন্য রকম বিষয। হৃৎপিণ্ডের রক্তবাহী ধমনীতে চর্বির প্রলেপ জমে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে হার্টের পেশি অক্সিজেনের অভাবে তখন ধুঁকতে শুরু করে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে হৃৎপিণ্ডের পেশির বিভিন্ন অংশগুলো ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যেতে শুরু করে। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় নানা অনিয়মের কারণে হার্ট অ্যাটাকের পাশাপাশি হার্ট ফেলিওরের সংখ্যাও আজকাল বাড়ছে। বেশ কিছু উপসর্গ দেখে হার্ট ফেলিওরের বিষয়টি সতর্ক হওয়া যায়। কিছু উপসর্গ ঘুমের মধ্যে দেখা দিলেও সতর্ক হতে হবে অতি জরুরি। আজ জেনে নিন ঘুমের মধ্যে কোন লক্ষণগুলো হার্ট ফেলিওরের উপসর্গও হতে পারে।
শ্বাস নিতে কষ্ট
ঘুমের মধ্যে যদি শ্বাস নিতে কষ্ট তাহলে সেই উপসর্গকে কখনই অবহেলা করা মোটেও উচিত নয়। হার্ট ফেলিওরের ক্ষেত্রে এমন উপসর্গ প্রায় লক্ষণীয়। এই ক্ষেত্রে রোগীর বিছানায় শুয়ে শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়, তাই শ্বাস নেওয়ার জন্য তাকে উঠে বসতে হয়। এই সমস্যাটিকে বলা হয় অর্থোপনিয়া।
প্যারোক্সিসমাল নক্টার্নাল ডিসপনিয়া (পিএনডি)
হার্ট ফেলিওর সমস্যা দেখা দিলে গভীর রাতে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। এটিকে বলা হয় প্যারোক্সিসমাল নক্টার্নাল ডিসপনিয়া। এই সমস্যা সাধারণত ঘুমিয়ে পড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই শুরু হয়। শ্বাসকষ্টের ও মনের ভিতর উদ্বেগ, অজানা কারণে ভয়, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট
এই ক্ষেত্রে ফুসফুসে তরল জমে থাকার কারণে কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্টও শুরু হয়। ঘুমের মধ্যে কাশি হলেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
হঠাৎ হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া
হার্ট ফেলিওরের কারণে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে হৃদস্পন্দন বেড়ে যেতে পারে। বুক ধড়ফড়ানির কারণে শরীরে অস্বস্তিও শুরু হয়। সেই কারণে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় রোগীর।
রাতে হঠাৎ হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া
হার্ট ফেলিওরের সমস্যা শুরু হলেই রাতে ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যেতেই পারে। ওই সময় বুকে ব্যথা, ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করার মতো উপসর্গগুলোও দেখা দিতে পারে। এমন উপসর্গ মাঝে-মধ্যে হলে সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org