দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পর আর কোন রকম অংশীদার ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্র মহাকাশে তৈরি হবে না। এর পরিবর্তে মহাকাশে জায়গা নিতে পারে বিভিন্ন দেশের একাধিক বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন।
ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ অন্তত ১০টি মহাকাশ কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষণাও দিয়েছে। আইএসএস পরবর্তীযুগ মহাকাশ পর্যটনের নতুন দুয়ার উন্মোচন করবে বলেও আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
স্নায়ুযুদ্ধের পর দুই পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া প্রথম যেভাবে এক হয়েছিল সেটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের চুক্তি। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া ছাড়াও বিশ্বের আরও ৩০টি দেশ এই মহাকশ কেন্দ্র পরিচালনা এবং নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। যে কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব প্রকল্প বলা হয়ে থাকে আইএসএস’কে।
গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে ২০৩০ সালে। তারপর এতো বড় পরিসরে আর কোন যৌথ প্রকল্প মহাকাশে দেখা যাবে না। এর বিপরীতে মহাশূন্যে ছোট ছোট মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনাও করছে বিভিন্ন দেশ। এতে পর্যটন বিকাশের পাশাপাশি বিভিন্নভাবে মহাকাশকে বাণিজ্যিকরণ করার সুযোগও সৃষ্টি হবে।
মহাকাশে প্রভাব বিস্তারের এই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আইএসআসের পর অন্তত ৫টি ব্যক্তিগত মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নাসা। ইতিমধ্যে নতুন মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের জন্য স্পেসএক্স বোয়িংসহ বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে কয়েকশ’ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিও করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
নাসার পরবর্তী ৫ মহাকাশ স্টেশনগুলো হলো অ্যাক্সিওম স্পেস স্টেশন, অরবিটাল রিফ, স্টারল্যাব, নর্থরুপ গ্রুম্যান স্টেশন, ভাস্ট স্পেস স্টেশন। ২০২৮ সালের পর হতেই এইসব স্টেশন প্রতিস্থাপনের কাজ শুরুর কথাও রয়েছে নাসার।
অপরদিকে মহাকাশের অন্যতম পরাশক্তি হওয়ার লড়াইয়ে রয়েছে চীন। ইতিমধ্যে ২০২২ সালে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তিয়ানগং মহাকাশ কেন্দ্রের প্রথম অংশ মহাশূন্যে স্থাপন করে বেইজিং। এতে তৃতীয় দেশ হিসেবে মহাকাশে স্টেশন তৈরির নজিরও গড়ছে চীন। থাকার ঘর, গবেষণাগার নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মতো বহু সুযোগ-সুবিধা রাখা রয়েছে তিয়ানগং কিংবা স্বর্গের প্রাসাদ নামে এই কেন্দ্রটিতে।
অপরদিকে রাশিয়াও ২০৩০ সালের মধ্যে নিজস্ব স্পেস স্টেশন নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন ৪ মডিউল কোরের স্টেশনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালে কেন্দ্রটির প্রথম অংশ মহাকাশে পাঠাতে চায় মস্কো।
রাশিয়া, আমেরিকা ও চীনের পর স্পেস স্টেশন নির্মাণ করে সারা বিশ্বে চতুর্থ স্থানের অধিকারী হতে চাইছে ভারত। ২০৩৫ সাল নাগাদ নিজস্ব প্রযুক্তির মহাকাশ কেন্দ্র স্থাপনের কথাও জানিয়েছে ইসরো। জানা যায়, ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশন নামক এই কেন্দ্রের ভেতরে ২ থেকে ৪ জন নভোচারী থাকার ব্যবস্থাও করা হবে।
এয়ারবাস লুপ নামে একটি মহাকাশ কেন্দ্র নির্মাণে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। ৮ মিটার ব্যাসার্ধের একক মডিউলের এই স্টেশনটি তৈরি করা হচ্ছে মহাকাশে দীর্ঘকাল টিকে থাকার জন্যই। এছাড়াও নভোচারীদের জন্য ভ্রমণকে উপভোগ্য করাই হবে এই মহাকাশ কেন্দ্রটির প্রধান উদ্দেশ্য।
অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান এবং কানাডার যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে আরেকটি মহাকাশ কেন্দ্র গেটওয়ে। ৫-মডিউলের স্টেশনটিকে চন্দ্রপৃষ্ঠে যাওয়ার পথে একটি বেস ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org