দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, রান্না করা খাবার ফ্রিজে টানা রেখে দিলেও তাতে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে যা শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর, বিশেষ করে তা যদি সরাসরি খাওয়া যায়।

আমরা জানি বাঙালিরা টাটকা রান্না করা খাবার খেতেই বেশি পছন্দ করতেন। তা আবার একবেলা নয়, দুইবেলাতে। সময়ের চাহিদা মেনে বাড়িতে ফ্রিজ এলেও তা মূলত কাজে আসতো পানি, দুধ, ফল, সবজি ও গরমকালের আইসক্রিম রাখার জন্যই। এরপর ধীরে ধীরে তৈরি করা খাবার রাখার অভ্যাস শুরু হয়ে যায়। বর্তমানে এমন অবস্থা হয়েছে প্রায় সারা সপ্তাহের রান্না ফ্রিজে বোঝাই করে টাইম ম্যানজমেন্ট করতে বাধ্য হচ্ছেন সকলেই। তাতে উপকার যেমনিভাবে হচ্ছে, অপকারও হচ্ছে সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, রান্না করা খাবার ফ্রিজে টানা রেখে দিলে তাতেও জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে যা শরীরের পক্ষেও অত্যন্ত ক্ষতিকারক, বিশেষ করে তা যদি সরাসরি খাওয়া যায়। তাই কয়েকটি খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে সঙ্গে সঙ্গেই খাবেন না। কোন খাবার সেগুলো?
ভাত
পানিতে ভেজানো পান্তাভাত স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ভালো। তবে তাই বলে ফ্রিজে পানি দিয়ে রাখা কিংবা এমনি ভাত যদি ঠাণ্ডা অবস্থাতেই খেয়ে ফেলেন তাহলে ক্ষতিও হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ঠাণ্ডা ভাতে ব্যাসিলাস সেরিয়াসের মতো ব্যাকটেরিয়াও থাকতে পারে। সেটি সঠিকভাবে পুনরায় গরম না করলে খাদ্যে বিষক্রিয়াও হতে পারে। পান্তাভাত খাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে পানি দেওয়া ভাত কখনও ফ্রিজে রাখবেন না।
মুরগির মাংস
রান্না করা মুরগির মাংস রেফ্রিজারেটরে রাখার পর সেটি গরম করলে আরও শক্ত হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া দূষণ এড়াতে এটি সঠিক তাপমাত্রায় গরম করে খাওয়াটাই বেশি নিরাপদ।
পিৎজ়া বা পাস্তা
পিৎজ়া বা পাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে গেলে শক্ত ও স্বাদহীন হয়ে ওঠে। এই দুই খাবার সরাসরি ফ্রিজ থেকে বের করে খাওয়া মোটেও ঠিক নয়। খাবারের ঠাণ্ডা ভাব দূর করে, গরম করে তারপর পিৎজ়া-পাস্তা খাওয়া উচিত।
আলু
কাঁচা বা সেদ্ধ আলু কোনওভাবেই ফ্রিজে রাখা মোটেও উচিত নয়। তাতে শর্করার হার আরও বেড়ে যায়। এটি শরীরে প্রবেশ করলে সহজেই ভাঙা যায় না। যে কারণে শরীরে ক্রমশ শর্করা জমতে থাকে। ঠাণ্ডা আলু সহজেই হজম হতে চায় না।
ডিম এবং সামুদ্রিক খাবার
ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা স্ক্র্যাম্বল কিংবা ভাজা ডিমের গঠন পরিবর্তন হয়েও যেতে পারে। সেই ডিম হজম করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। আবার কিছু সামুদ্রিক খাবার ফ্রিজ থেকে বের করেই খাওয়া মোটেও উচিত নয়। তাতে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির ঝুঁকিও থাকে। তাই খাবার আগে ভালোমতো গরম করে নেওয়াই নিরাপদ।
স্যুপ-ঝোল
ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা স্যুপ, ঝোল বা গ্রেভি খেতে একেবারেই স্বাদহীন। এগুলো গরম না করে খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org