দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইসরায়েল ইয়েমেনের লোহিত সাগর উপকূলবর্তী হুদায়দা বন্দরে ধারাবাহিকভাবে বিমান হামলা চালিয়েছে। হুতি-অনুমোদিত আল মাসিরাহ টেলিভিশন চ্যানেল ১৬ সেপ্টেম্বর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলের দাবি, হামলাগুলো হুতিদের সামরিক কার্যক্রমের জবাবে চালানো হয়। তবে এইসব হামলায় ডজন ডজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। -খবর আল জাজিরার।
আল মাসিরাহর এক তথ্যমতে, ১৬ সেপ্টেম্বর হুদায়দা বন্দরে মোট ১২টি বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। হুতি মুখপাত্র ইয়াহইয়া সারি এক্স-এ (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানান যে, ‘আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো মোকাবিলা করছে, যেগুলো আমাদের ভূখণ্ডেও হামলা চালাচ্ছে।’ হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হুদায়দা বন্দর খালি করার জন্য সতর্কতাও জারি করে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচায় আদরাঈ এক্স-এ লিখেছিলেন যে, ‘আপনাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা হুদায়দা বন্দর ও সেখানে নোঙর করা জাহাজগুলোর সবাইকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বন্দরের দু’টি সূত্র জানিয়েছে, হামলার লক্ষ্য ছিল ৩টি ডক, যেগুলো আগের ইসরায়েলি হামলার পর মেরামত করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য হলো, হামলাটি প্রায় ১০ মিনিট স্থায়ী ছিল। এই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, ‘হুতিরা যদি ইসরায়েলে হামলা চালায়, তবে তাদেরকে কঠিন মূল্য দিতে হবে।’
২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর হতে ইয়েমেনের হুতিরা ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছে। তারা লোহিত সাগরের জাহাজকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। ১৬ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে যে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রও তারা প্রতিহত করেছে, এরপর পশ্চিম জেরুজালেমে সাইরেন বাজতে শুরু করে। এর জবাবে ইসরায়েল হুতিদের নিয়ন্ত্রিত বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামোতে হামলা চালাচ্ছে ও বেসামরিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সংঘাত আরও তীব্র রূপ ধারণ করেছে। গত রবিবার হুতিরা ইসরায়েলের ইলাত শহরের কাছে রামোন বিমানবন্দরে ড্রোন হামলার দায় স্বীকার করেছে, যাতে দু’জন আহত হন ও বিমানবন্দরের কার্যক্রম কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে। গত বুধবার ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ গভর্নরেটে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। ১৬ সেপ্টেম্বর শত শত মানুষ ওই হামলায় নিহত ৩১ জন সাংবাদিকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেয়।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী গত মাসের শেষের দিকে সানায় বিমান হামলা চালিয়ে হুতি প্রধানমন্ত্রী আহমেদ আল-রাহাওয়িকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় তার মন্ত্রিসভার প্রায় অর্ধেক সদস্য নিহত হন। তারপর হুতি গোষ্ঠী প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ঘোষণা দেয়। কয়েক সপ্তাহ পর শুক্রবার হুতিদের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org