দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশে কচু একটি জনপ্রিয় এবং প্রাচীন সবজি, যা শুধু গ্রামীণ জীবনেই নয়, শহরেও সমানভাবে খাওয়া হয়। কচু মূলত একটি কন্দজাতীয় সবজি, যার পাতা, ডাঁটা এবং মূল সবই খাওয়া যায়।

এটি স্বাদে অনন্য এবং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। অনেকেই কচুকে সাধারণ সবজি মনে করলেও, এর পুষ্টিমান এবং স্বাস্থ্যের উপকারিতা সত্যিই বিস্ময়কর।
প্রথমেই কচুর পুষ্টিগুণের কথা বলা যাক। কচুতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬, আয়রণ, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। এটি শরীরকে শক্তি জোগায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। বিশেষ করে কচুর মধ্যে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। যারা নিয়মিত হজম সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য কচু একটি কার্যকর সবজি।
কচুর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়াও ম্যাগনেশিয়াম এবং আয়রণ রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তাল্পতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কচুতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে মুক্ত মৌল বা ফ্রি-র্যাডিকেল দূর করে, ফলে বার্ধক্য বিলম্বিত হয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
এ ছাড়াও কচুতে থাকা ভিটামিন বি৬ স্নায়ুতন্ত্রকে মজবুত করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। ভিটামিন সি দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ঠান্ডা, কাশি ও অন্যান্য সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। কচুতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় এবং দাঁতকে মজবুত করে।
তবে কচু খাওয়ার আগে কিছু সতর্কতা জরুরি। কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামক এক ধরনের পদার্থ থাকে, যা কাঁচা অবস্থায় গলায় চুলকানি বা জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটি অবশ্যই ভালোভাবে সিদ্ধ কিংবা রান্না করে খাওয়া উচিত।
কচু একটি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর সবজি। এটি যেমন সহজলভ্য, তেমনি এর পুষ্টিগুণও আমাদের শরীরের জন্য অমূল্য। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় কচু অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের শক্তি বাড়ে, হজম ভালো থাকে এবং নানা রোগের ঝুঁকি কমে। তাই কচুকে অবহেলা না করে সঠিকভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত- কারণ প্রকৃতির এই সাধারণ সবজিটিই হতে পারে সুস্বাস্থ্যের অন্যতম একটি উৎস।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org