দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফোন চুরি বা হারানো মানেই শুধু একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস হারানো নয়- তারমধ্যে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য, সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাকাউন্ট এবং আর্থিক লেনদেনও ঝুঁকিতে পড়ে।

তাই পরিস্থিতি শান্তভাবে বিচার করে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নিচে ধাপে ধাপে করণীয়গুলো বর্ণনা করা হলো।
প্রথম ধাপ
শান্ত থাকুন এবং খোঁজ করুন: প্রথমত মন গরম করে সিদ্ধান্ত নেবেন না। ফোনটি কোথায় শেষবার ছিলো তা খুঁজে দেখুন, কিংবা কোন কেস বা কার্ড থাকার জায়গা থেকে পড়ে গেছে কিনা পরীক্ষা করুন। অনেক সময় ফোনটি ভুল জায়গায় পড়ে থাকে বা কাউকে দিয়ে রেখেছিলেন।
দ্বিতীয় ধাপ
ডিভাইসে লোকেটিং ও ব্লকিং চেষ্টা করুন: আপনার ফোন অ্যান্ড্রয়েড হলে Google-এর Find My Device এবং আইফোন হলে Find My iPhone সেবা ব্যবহার করে ফোনের অবস্থান ট্র্যাক করতে চেষ্টা করুন। ফোন অনলাইন থাকলে লোকেশন দেখাতে পারে এবং রিমোট লক বা ডাটা ওয়াইপ করার অপশন আছে। এই ধরনের পদক্ষেপের আগে ফোনে থাকা লোকেশন ও রিমোট-ওয়াইপ ফিচার সক্রিয় আছে কিনা যাচাই করুন। নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলে দূর থেকে ডিভাইস লক করে পাসকোড বদলে দিন।
তৃতীয় ধাপ
সিম কার্ড ব্লক করুন: আপনার মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার এ ফোন করে সিম ব্লক করান যাতে চুরিকে আপনার নম্বর ব্যবহার করে কল বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাক্সেস না করতে পারে। নতুন সিম নিলে পূর্বের নম্বর ট্রান্সফার করান।
চতুর্থ ধাপ
গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট লক বা পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও পেমেন্ট অ্যাপগুলোর পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করুন। দুই ধাপের যাচাইকরণ (Two-Factor Authentication) সক্রিয় না থাকলে তা এখনই চালু করুন।
পঞ্চম ধাপ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ করুন: নিকটস্থ থানায় ফোন চুরির একটি অভিযোগ দায়ের করুন এবং সিম-আইএমইআই নম্বরসহ (যদি থাকে) ফোনের ডিটেইলস জমা দিন। থানায় FIR করার কপি রেখে দিন; এটি ক্ষতিপূরণের কাজ বা অপারেটরের সঙ্গে সমন্বয়ে জরুরি হতে পারে।
ষষ্ঠ ধাপ
অপারেটর ও ডিভাইস প্রস্তুতকারকের সাথে যোগাযোগ: ফোনের IMEI নম্বর জানালে অপারেটর সেটি ব্লক করে দিতে পারে। প্রস্তুতকারকের সাপোর্টে যোগাযোগ করলে ডিভাইস ট্র্যাকিং বা লকিং সম্পর্কিত নির্দেশ পাবেন।
সপ্তম ধাপ
ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা ও নজরদারি: আপনার পরিচিতদের জানিয়ে দিন কোন অ্যাকাউন্ট থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ আসলে তা উপেক্ষা করতে এবং সন্দেহজনক লেনদেন হলে স্বীকার করুন। ব্যাংকে জানালে তারা ফ্রড চেক করতে পারবে।
আইনি ও বীমা বিষয়ক পদক্ষেপ
যদি আপনার ফোনের মধ্যে মূল্যবান তথ্য বা সংবেদনশীল নথি ছিল, তাহলে আইনি পরামর্শ নেওয়া বিবেচনা করুন। কিছু ক্ষেত্রে আপনার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মোবাইল চুরি কভার করে—পলিসি দেখুন এবং দাবি করার প্রক্রিয়া শুরু করুন। সচেতন থাকুন এবং সময়মতো পদক্ষেপ নিলে পুনরুদ্ধার বা ক্ষতি প্রশমন সম্ভব।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন, ডিভাইসে লোকেশন ট্র্যাকিং ও রিমোট-ওয়াইপ চালু রাখুন, শক্ত পাসকোড ব্যবহার করুন এবং সংবেদনশীল অ্যাপগুলোতে আলাদা পাসওয়ার্ড বা বায়োমেট্রিক সুরক্ষা রাখুন। নিয়মিত নিরাপত্তা পরিদর্শন এবং অচেনা লিংক বা অ্যাপ না খোলাই দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। তাই সতর্ক থাকুন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org