দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউয়ে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে। প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে গ্রেফতার করার পর একদল সেনা কর্মকর্তা ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছে।

রাজধানী বিসাউয়ে গোলাগুলির শব্দ শোনার কিছুক্ষণ পর সরকারি সূত্র বিবিসিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অভ্যুত্থানকারী সৈন্যরা ক্ষমতা গ্রহণের পরই দেশটির চলমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে ও দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে প্রেসিডেন্ট এমবালো ফরাসি গণমাধ্যম ‘ফ্রান্স ২৪’–কে ফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।’
সরকারি সূত্র এরপর বিবিসিকে জানায়, সেনারা প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্নান্দো দিয়াস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডোমিঙ্গোস পেরেইরা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বটশে কান্ডেকেও আটক করা হয়েছে। একইসঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল বিআগে না এনটান ও তার ডেপুটি জেনারেল মামাদু টুরেকেও আটক করা হয় বলে জানা যায়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানকারী দলটির কর্মকর্তারা বলেছেন, গত রবিবার অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল ঘোষণার কথা থাকলেও এখন তারা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াটিই স্থগিত করেছেন।
তাদের দাবি, অজ্ঞাত কয়েকজন রাজনীতিক ও তাদের পেছনে থাকা ‘একজন পরিচিত মাদক চোরাকারবারি’র সহায়তায় দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছিলো, এটি ঠেকাতেই তারা হস্তক্ষেপ করেছেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামরিক ইউনিটের প্রধান জেনারেল ডেনিস এন’কানহা রাষ্ট্রীয় টিভিতে হাজির হয়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, সেনারা ‘শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উচ্চ সামরিক কমান্ড’ গঠন করেছে ও জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
সেনারা দেশের সব সীমান্ত বন্ধ ও সেইসঙ্গে রাত্রিকালীন কারফিউও জারি করেছে। অভ্যুত্থানের পর পুরো বিসাউয়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে ও এতে করে সন্ধ্যা ৭টার আগে থেকেই শহর কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়।
সেনেগাল এবং গিনির মাঝখানে অবস্থিত গিনি-বিসাউ ১৯৭৪ সালে পর্তুগালের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর হতেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ ও মাদক চোরাচালানের জন্য পরিচিত। স্বাধীনতার পর দেশটিতে অভ্যুত্থান এবং অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে অন্ততপক্ষে ‘৯ বার।’
অভ্যুত্থানের আগে আজ (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনের ফল প্রকাশের কথা ছিল। এমবালো এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্নান্দো দিয়াস- দুজনই নিজেদের বিজয় দাবি করেছিলেন। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই দেশকে ‘নারকো-স্টেট’ বলে আখ্যা দিয়েছে, কারণ দক্ষিণ আমেরিকা হতে ইউরোপে কোকেন পাচারের গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে এই দেশটি।
এই ঘটনায় পর্তুগাল দ্রুত সাংবিধানিক শাসন ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে ও সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থাকতেও আহ্বান জানায়। গিনি-বিসাউ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি ও এর জনসংখ্যা ‘২০ লাখেরও বেশি।’
২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্বাচিত হন প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালো। তথ্যসূত্র: বিবিসি।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org