দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীত এলেই অনেকের সবচেয়ে সাধারণ ও বিরক্তিকর সমস্যার একটি হলো পা ফাটা। আবহাওয়ার শুষ্কতা, ঠান্ডা বাতাস এবং আর্দ্রতার ঘাটতি পায়ের ত্বককে কাগজের মতো রুক্ষ ও শক্ত করে তোলে।

বিশেষ করে গোড়ালির অংশ বেশি আক্রান্ত হয়। সময়মতো যত্ন না নিলে পা ফাটার সমস্যা তীব্র হয়ে ব্যথা, রক্তপাত এমনকি সংক্রমণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই শীতের শুরুতেই সঠিক যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পায়ের ত্বক আর্দ্র, নরম ও সুস্থ রাখতে কী কী করণীয়- চলুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমেই আপনাকে পা পরিষ্কার রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সারাদিন ধুলোবালিতে ঘোরাফেরার পর পায়ে ময়লা এবং মৃত কোষ জমে। এগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার না হলে ত্বক রুক্ষ হয়ে ফেটে যায়। প্রতিদিন রাতে কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারেন ১০–১৫ মিনিট। পানিতে চাইলে সামান্য লবণ বা ভিনেগার মেশানো যেতে পারে। এটি পায়ের ত্বক নরম করে এবং মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। ভিজানোর পর হালকা ব্রাশ বা পিউমিক স্টোন দিয়ে গোড়ালি ঘষে পরিস্কার করুন।
পরবর্তীতে ধাপ হলো নিয়মিত ময়েশ্চারাইজিং। শীতকালে পায়ের ত্বক আর্দ্রতা দ্রুত হারায়, তাই গোসলের পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে পায়ে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার, ভ্যাসেলিন, গ্লিসারিন বা বেবি অয়েল লাগাতে পারেন। চাইলে গ্লিসারিন ও গোলাপজলের মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে—এটি পায়ের ত্বককে নরম রাখতে অত্যন্ত কার্যকর। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পর মোজা পরলে আর্দ্রতা আরও ভালোভাবে ধরে রাখা যায়।
শীতের সময় পানি কম পান করার প্রবণতা দেখা যায়, যা শরীরের ভেতর থেকেই ত্বককে শুষ্ক করে তোলে। এজন্য প্রতিদিন প্রয়োজন অনুযায়ী পানি পান করা জরুরি। পাশাপাশি ভিটামিন ‘ই’, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন বাদাম, মাছ, ডিম, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল খেলে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। ভেতর থেকে ত্বক পুষ্ট থাকলে পা ফাটার ঝুঁকিও কমে।
এ ছাড়াও পায়ে চাপ পড়ে এমন শক্ত স্যান্ডেল বা খোলা জুতো ব্যবহার এড়ানো উচিত। এতে পায়ের ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। নরম সোলযুক্ত আরামদায়ক জুতো পা ফাটা প্রতিরোধে সহায়ক। যারা দীর্ঘ সময় পানি বা ঠান্ডায় কাজ করেন তাদের জন্য পায়ে সুরক্ষামূলক ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা ভালো।
মনে রাখা দরকার যে, পা ফাটা কোনো তুচ্ছ সমস্যা নয়। অবহেলা করলে ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। যদি পায়ের ফাটা জায়গা গভীর হয়ে যায়, ব্যথা বাড়ে বা পুঁজ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। শীতের আগেই নিয়মিত যত্ন শুরু করলে পা ফাটা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। দৈনন্দিন অভ্যাসে সামান্য পরিবর্তনই পারে আপনার পায়ের ত্বককে রাখতে নরম, সুন্দর এবং সুস্থ।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org