দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহিলাদের মতো পুরুষদের স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে অনেকগুলো। যেগুলো আমাদের জানা একান্ত দরকার।
পুরুষরা কায়িক পরিশ্রম মহিলাদের তুলনায় অনেক সময় বেশি করে থাকে। কারণ তাদের ঘরে থাকতে হয় না। বাইরে চলা-ফেরা থেকে শুরু করে অনেক পরিশ্রমের কাজ করতে হয়। তবে পরিশ্রমের জন্য নয়, অন্যান্য কিছু কারণে তাদের অর্থাৎ পুরুষদের শারীরিক নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে এগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে অনায়াসে তা প্রতিরোধ করা যাবে। এ বিষয়ে অনলাইন (বিখ্যাত সংস্থা সিডিসি এবং আরও কয়েকটি স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান উদ্বৃত) থেকে প্রাপ্ত কিছু তথ্য প্রদান করা হলো। যেগুলো প্রতিটি পুরুষদের ফলো করা উচিত।
ক্যানসার
দেখা গেছে, পুরুষের মধ্যে ক্যানসারের কারণে যাদের মৃত্যু হয়, এরমধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুসের ক্যানসার। আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির অভিমত: এর কারণ হলো ধূমপান। এরপর রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার ও কোলেস্টেরল ক্যানসার।
ক্যানসার প্রতিরোধ করতে হলে—
# ধূমপান করা যাবে না। তামাকপাতা, জর্দা, গুল চিবানো যাবে না।
# পাশে কেউ ধূমপান করলে দূরে সরে যেতে হবে।
# দৈনন্দিন জীবনে শরীরচর্চা থাকতেই হবে।
# স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।
# ফল ও শাকসবজিসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর আহার। এড়িয়ে যেতে হবে চর্বিবহুল খাবার।
# কড়া রোদে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক নয়। ছাতা ও মাথাল ব্যবহার, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
# মদ্যপান বর্জন করতে হবে।
# নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ও সাহায্য নিতে হবে।
# ক্যানসার জনক বস্তু অর্থাৎ কার্সিনোজেন যেমন, রেড়ন, এসবেসটস বিকিরণ ও বায়ুদূষণের মুখোমুখি যাতে না হতে হয়, সে রকম ব্যবস্থা করা।
হূদরোগ
পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রধান ঝুঁকি তো বটেই। আর স্বাস্থ্যকর জীবন পছন্দ মানলে হূদস্বাস্থ্য ভালো থাকবে অবশ্যই।
# ধূমপান করা যাবে না। তামাক, জর্দা, গুল চিবানো চলবে না। কেউ ধূমপান যদি করে, তার পাশে থাকা যাবে না। বারণ করতে ব্যর্থ হলে দূরে সরে যেতে হবে।
# স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাকসবজি, টাটকা ফল, গোটা শস্যদানা, আঁশ ও মাছ। যেসব খাবারে চর্বি বেশি, নুন বেশি সেসব খাবার বর্জন করা ভালো।
# রক্তে যদি থাকে উঁচুমান কোলেস্টেরল, থাকে যদি উচ্চরক্তচাপ তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা নিতে হবে।
# প্রতিদিন জীবনযাপনের অংশ হবে শরীরচর্চা।
# স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে হবে।
# মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করতে হবে। ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে রক্তের সুগার মান বজায় রাখতে হবে।
# মানসিক চাপকে মোকাবিলা করতে হবে।
স্ট্রোক
স্ট্রোকের কিছু ঝুঁক আছে, যা পরিবর্তন করা যায় না যেমন, পারিবারিক ইতিহাস, বয়স ও গোত্র। তবে আরও কিছু ঝুঁকি আছে যেগুলো বেশ বদলানো যায়।
# ধূমপান করা ঠিক নয়।
# রক্তচাপ বেশি হলে বা রক্তে কোলেস্টেরল মান বেশি থাকলে চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
# খাবারে যদদূর সম্ভব স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম থাকা ভালো। ট্রান্সফ্যাট একেবারে বাদ দিলেই মঙ্গল।
# স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।
# প্রতিদিনের দিন যাপনে ব্যায়াম অবশ্যই থাকা উচিত।
# ডায়াবেটিস যদি থাকে, তাহলে রক্তের সুগার যেন থাকে নিয়ন্ত্রণে।
# মদ্যপান করে থাকলে বর্জন করা উচিত।
আঘাতজনিত সমস্যা
সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল সিডিসির মত অনুযায়ী পুরুষের মধ্যে মারাত্মক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো, মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা। ভয়ানক দুর্ঘটনা এড়াতে হলে—
# গাড়িতে সিটবেল্ট পরতে হবে।
# গাড়ি চালানোর সময় গতিসীমা মেনে চলা উচিত।
# মদ বা অন্য কোনো নেশা করে গাড়ি চালানো উচিত নয়।
# ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানো ঠিক নয়।
মারাত্মক দুর্ঘটনার অন্যান্য বড় কারণ হলো, পতন, পিছলে পড়ে যাওয়া, বিষক্রিয়া। বায়ু চলাচল হয় এমন স্থানে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা উচিত, স্নানঘরে পিছলে যায় না এমন ম্যাট ব্যবহার করা উচিত।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
সবচেয়ে সচরাচর ডায়াবেটিস টাইপ ২ ডায়াবেটিস রক্তে বেড়ে যায় সুগার।
একে নিয়ন্ত্রণ না করলে হয় নানা রকমের জটিলতা, হূদরোগ, অন্ধত্ব, স্নায়ু রোগ, কিডনির রোগ।
একে প্রতিরোধ করতে হলে—
# শরীরে বেশি ওজন থাকলে বাড়তি ওজন ঝরাতে হবে।
# ফল, শাকসবজি ও কম চর্বি খাবারে সমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। দৈনন্দিন জীবনযাপনে থাকবে অবশ্যই ব্যায়াম।
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু
# ইনফ্লুয়েঞ্জা হলো সচরাচর একটি ভাইরাস সংক্রমণ। সুস্থ শরীরের মানুষের জন্য ফ্লু এত গুরুতর নয় বটে, তবে ফ্লুর জটিলতা মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে যাদের দেহ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যাদের ক্রনিক রোগ রয়েছে।
# ফ্লু থেকে রক্ষা পেতে হলে বছরে একবার ফ্লুর টিকা নিতে হবে।
আলঝাইমারস রোগ
এই রোগ প্রতিরোধ করার কোনো প্রমাণিত উপায় নেই। তবে এসব পদক্ষেপ নেওয়া যায়—
# হূদযন্ত্রের যত্ন নেওয়া ভালো। উচ্চরক্তচাপ থাকলে হূদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস উঁচুমান কোলেস্টেরল থাকলে আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
# মাথায় যাতে আঘাত না লাগে, দেখা উচিত। মাথায় আঘাত লাগার সঙ্গে ভবিষ্যতে আলঝাইমার রোগ হওয়ার একটি সম্পর্ক আছে, বলেন অনেকে।
# স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা উচিত।
# প্রতিদিন ব্যায়াম।
# ধূমপান বর্জন।
# মদ্যপান বর্জন।
# সামাজিক মেলামেশা চালিয়ে যান।
# মানসিক ফিটনেস বজায় রাখতে হবে। মগজ খেলানোর জন্য চর্চা, ব্যায়াম। নতুন জিনিস শেখার চেষ্টা করা।
আত্মহত্যার মতো দুর্ঘটনা
# পুরুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বড় একটি হলো আত্মহত্যা। অনেক দেশে, সমাজে পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার কারণ হলো বিষণ্ন্নতা।
# মন বিষণ্ন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। চিকিৎসা তো রয়েছেই।
# নিজের সর্বনাশ করা কেন? যতই প্রতিকূল অবস্থাই হোক, যত বিপদই হোক, একে অতিক্রম করাই তো মানুষের কাজ।
সিওপিডি
শ্বাসযন্ত্রের ক্রনিক রোগ যেমন ব্রংকাইটস এবং এমফাইসেমা-এদের বলে সিওপিডি। পুরো মনে করলে দাঁড়ায় কুনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। এ রোগ ঠেকাতে হলে—
# ধূমপান কখনই নয়। কেউ ধূমপান করলে পাশে, সে ধোঁয়াও গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
# রাসায়নিক বস্তু এবং বায়ু দূষণের মুখোমুখি যত কম হওয়া যায়, ততই মঙ্গল।
কিডনির রোগ
ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপের প্রথম জটিলতা হলো কিডনি বিকল হওয়া। ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ থাকলে চিকিৎসকের চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতে হবে।
# স্বাস্থ্যকর আহার। নুন কম খেতে হবে।
# প্রতিদিন ব্যায়াম
# ওজন বেশি থাকলে ওজন ঝরানো।
# ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ।
উপরোক্ত বিষয়গুলোর দিকে প্রতিটি পুরুষের দৃষ্টি দেওয়া একান্ত দরকার। সমস্যা যত প্রকটই হোক না কেনো, সমাধানের পথ জানা থাকলে কোন সমস্যায় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে না। স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হোন, নিজে সুস্থ্য থাকুন এবং অপরকে সুস্থ্য থাকতে সাহায্য করুন।