দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হরতালকে সহিংসতায় রূপ দিতে যে জিনিসটি ইদানিং বেশি ব্যবহার হচ্ছে তা হলো গান পাউডার। এই গান পাউডার আসছে কোথা থেকে কিভাবে। আর কেনইবা রোধ করা যাচ্ছে না। এর অবাধ বিচরণ রোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সংহিসতা ও নাশকতায় নিষিদ্ধ গান পাউডারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে ভয়াবহভাবে। সাম্প্রতিক সময়ে যানবাহনে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দেয়ার ঘটনা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির একের পর এক অভিযানে গান পাউডারের চালান আটক হলেও কারা কিভাবে কোন পথে এই বিস্ফোরক আনছে সে বিষয়ে ভালো মতো তদন্ত হচ্ছে না। যে কারণে আসল অপরাধিরা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং সেই সাথে এর অবাধ বিচরণও প্রতিরোধ হচ্ছে না সেভাবে। শুধু রাজধানীতেই তা নয়, দেশের গ্রাম-গঞ্জেও নাকি হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় এই প্রাণঘাতী গান পাউডার।
এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, গান পাউডার পেট্রোল বোমার থেকেও ভয়াবহ। বাস-ট্রেনে যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে সটকে পড়ায় সাধারণ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হচ্ছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে যারা সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বাঁচেছেন তারা বয়ে বেড়াচ্ছেন পঙ্গুত্ব এবং এক অভিশপ্ত জীবন। গত তিনটি হরতালের শেষের দুটি হরতালে বাসে আগুনের এ ঘটনাটি বেশি দেখা গেছে। এতে অন্তত ৪৪ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫ জন মারা গেছেন। ২-১টি ঘটনায় কয়েকজন ব্যবহারকারী আটক হলেও মূল হোতারা বরাবরের মতো ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, শিবির ক্যাডাররা এসবের মজুদ গড়ে তুলেছে। এছাড়া সীমান্তের একাধিক চোরাচালানি চক্র এসব বোমার কারিগরদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে। এই গান পাউডার পরবর্তীতে যাচ্ছে সন্ত্রাসী ও ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের সর্বত্র। সামপ্রতিক সময়ের হরতালে এসব গান পাউডার ব্যবহার এতোটাই বেড়েছে যে, এ বিষয়টি নিয়ে স্বয়ং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও চিন্তিত- পুলিশের এক কর্মকর্তা এমনটাই বলেছেন।
গান পাউডারের বেশ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে ২০০৪ সালে ঢাকার হোটেল রূপসী বাংলার (তৎকালীন শেরাটন) সামনের রাস্তায় বিআরটিসি দোতলা বাসে গান পাউডার দিয়ে লাগানো আগুন লাগানো হয়। এতে পুড়ে কঙ্কাল হয়ে মারা যান ১১ জন। ওই ঘটনার রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। অপরদিকে ২০১০ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে গান পাউডার ছিটিয়ে লাগানো আগুনে পুড়ে একই পরিবারের নিহত হন ১০ জন। সম্প্রতি বিএনপি-জামাত জোটের ডাকা তিন দফা হরতালের শেষের দুই দফায় গত ৬০ ঘণ্টা করে ও পরে ৮৪ ঘণ্টার হরতালে নিহত ৫ জনের মধ্যে গাজীপুরে মনির নামে যে কিশোর আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় তার শরীরেও গান পাউডারের নমুনা পাওয়া যায়।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয় দলের প্রধান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ছানোয়ার হোসেনের উদ্বৃতি দিয়ে একটি সংবাদ মাধ্যম বলেছে, বাংলাদেশে বাণিজ্যিক উদ্দেশে বৈধভাবে গান পাউডার আমদানি করা হয়। কিছু অসাধু আমদানিকারক বৈধ পথে নিয়ে আসা গান পাউডার তুলে দিচ্ছে দুর্বৃত্তদের হাতে। এছাড়া অবৈধ চোরাই পথেও গান পাউডার দেশে প্রবেশ করছে। পটকা, আতশবাজি, গুলি তৈরির মতো বিভিন্ন কাজে গান পাউডার ব্যবহূত হয়। এ সম্পর্কে জানা যায়, গান পাউডার খুব দ্রুত জ্বলে। এটি যে কোনো কিছুর বিস্ফোরণকে খুব ত্বরান্বিত করে থাকে। আর তাই গান পাউডার ছিটিয়ে গাড়িতে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে দিতে ইদানিং এটি ব্যবহার করছে সন্ত্রাসীরা।
এভাবে আর কতদিন মানুষকে পুড়িয়ে মারা হবে। এই গান পাউডারের সহজলভ্যতা যদি দূর করা না যায় তাহলে একের পর এক ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সীমান্ত পথসহ অন্যান্য পথে যাতে চোরাচালান না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে এবং যারা বৈধভাবে এই গান পাউডার আমদানি করছে তাদের ওপর কড়া নজরদারি করতে হবে। পক্ষান্তরে জনসাধারণকেও আরও সজাগ হতে হবে। যাতে অপরাধীরা কোন অপকর্ম করে ছাড় না পায়। সম্মিলিতভাবে এসব সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে হবে।