ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ঋণ বিতরণ করছে তফসিলি ব্যাংকগুলো। এই অভিযোগ উঠেছে দেশের কার্যরত ১৬ তফসিলি ব্যাংকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণ বিতরণ করছে দেশের ১৬টি তফসিলি ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মাচার মানছে না এসব ব্যাংক। এমন ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে ২৮ মে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো ঋণ আমানতের (ক্রেডিট ডিপোজিট রেশিও) নির্ধারিত হার আগামী জুনের মধ্যে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশনের বর্তমানে ঋণ আমানতের হার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশের মধ্যে রাখার কথা। এর আগে এটা ছিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ৮২ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৮.৫ শতাংশ। গত বছরের মার্চে তা কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়। ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহের ব্যবধান কমিয়ে ব্যাংকগুলোর দায়-সম্পদ ব্যবস্থাপনা সুসংহত করা এবং ঋণের প্রবৃদ্ধি কমাতে ঋণ আমানতের হার বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল হিসেবেও এটা করা হয়।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসকে সুর চৌধুরী বলেন, যেসব ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বাইরে ঋণ বিতরণ করছে তাদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, যাতে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুযায়ী ঋণ ও আমানতের হার ঠিক রাখে। এজন্য তাদের আগামী এক মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। যেসব ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ে এটা করতে ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন কোন ব্যাংকের বেশি পরিমাণে ঋণ বিতরণের ফলে ব্যাংক খাতে কিছুটা তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ঋণ আমানতের হার যথাযথভাবে পালন না করলে একদিকে ব্যাংকের আমানতকারীরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে থাকেন, অপরদিকে ব্যাংক খাতেও সমস্যা দেখা দেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এপ্রিল পর্যন্ত করা সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কোন কোন ব্যাংক ২০৬ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে। বেসরকারি খাতে পরিচালিত দুটি ব্যাংক নিয়ম অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া বাকি সব ব্যাংকের ঋণ বিতরণ আইনি সীমার নিচে রয়েছে। তবে সার্বিক ঋণ বিতরণ ও আমানত সংগ্রহের ব্যবধান কম রয়েছে ব্যাংকগুলোর। এক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯০.৮৯ শতাংশ এবং নন ইসলামী ব্যাংকগুলোর সিডিআর রেশিও ৮.২৩ শতাংশ। ব্যাংকগুলোর সার্বিক ঋণ ও আমানতের হার রয়েছে ৮০.৬৭ শতাংশ।
এপ্রিল শেষে বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত হকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংক কর্পোরেশনের (এইচএসবিসি) ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি ২৪৯ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় খাতে পরিচালিত অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধির হার ২০৬ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে বেসরকারি খাতে পরিচালিত দ্য সিটি ব্যাংকের। এ ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৫৯ শতাংশ। সরকার মালিকানায় পরিচালিত বিশেষায়িত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল) ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এ ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৩৫ শতাংশ। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১২০ শতাংশ। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের উল্লিখিত সময়ে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার ১১৬ শতাংশ। এছাড়া বাকি ১০টি ব্যাংকের সীমার অতিরিক্ত ঋণের প্রবৃদ্ধি হলেও তাদের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০০ শতাংশ এর নিচে রয়েছে।
বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ঋণের প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। এ পর্যন্ত এ ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭৩ শতাংশ। বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে আল-ফালাহ ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি কম রয়েছে। এ ব্যাংকটির ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭০ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকটি আরও ১৫ শতাংশ বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারে।
এপ্রিল শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত গড়ে ৮৩.৭৬ শতাংশ। রাষ্ট্রীয় মালিকানায় পরিচালিত ব্যাংকগুলোর ৭৪.৭১ শতাংশ, বিদেশী মালিকানায় পরিচালিত ব্যাংকের ঋণের প্রবৃদ্ধি ৮০.৫৯ শতাংশ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের এ হার ৮২.১৩ শতাংশ।