দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইতিহাসের কিছু বিষয় মানুষকে এখনও নাড়া দেয়। যেমন মিশরের পিরামিড। মিশরের পিরামিড নিয়ে যুগে যুগে কম গবেষণা হয়নি। আজ রয়েছে পিরামিডের মমি সংরক্ষণ কাহিনী।
পিরামিডের এই ধারণাটিই বা এলো কিভাবে। আবার কিভাবে এই পিরামিডে মমি সংরক্ষণ করা হতো। এমন অনেক প্রশ্নই এখনও রয়ে গেছে। সব প্রশ্নের জবাব এখনও মেলেনি। পিরামিডে মমি করে রাখা ও এর আদিগন্ত জানার আগ্রহ রয়েছে অনেকেরই। ইতিহাসে মিশরীয়দের এই অবদান এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এক কথায় বলা যায়, মিশরের পিরামিড ও মমি বিশ্ব ইতিহাসের এক অনবদ্য অধ্যায়।
কবে কিভাবে গড়ে উঠেছিল সেই অধ্যায়
মিশরের এই পিরামিডগুলো গড়ে উঠেছিল তৎকালীন ফারাওদের সমাধিসৌধ হিসেবে। সে সময় ফারাওদের মৃতদেহগুলো সরাসরি মাটি চাপা না দিয়ে মমি তৈরি করে পিরামিড বা সমাধিসৌধ নির্মাণ করা হতো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই সমাধিসৌধ বা পিরামিডে মৃতদেহগুলোকে সমাহিত করার আগে মমি তৈরি করা হতো। আবার এমন অনেক মৃতদেহ ছিল যেগুলো অখ্যাত ব্যক্তির হওয়ায় পিরামিড তৈরি করা হত না তবে মৃতদেহগুলো শুধু মমি তৈরি করার পর সমাহিত করা হতো। এই মমি তৈরি করার পিছনেও ছিল এক অভিনব পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে মমিগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা হতো, যাতে সেগুলো পচে-গলে নষ্ট না হয়ে যায়।
সে সময় মিশরের অধিবাসীদের বিশ্বাস ছিল যে, মৃত্যুর পরও মানুষের জীবনের অস্তিত্ব থাকে। আর কারণে তারা মৃত্যুর পর তাদের আত্মীয়স্বজনের দেহ আগুনে দাহ করত না অথবা স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কবরস্থও করত না।
আদি ইতিহাস থেকে যা পাওয়া যায় তা হলো, যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩ হাজার বছর আগে থেকে তারা ভূগর্ভস্থ কক্ষে শায়িত অবস্থায় বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে মৃতদেহগুলো কবরস্থ করতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মরুভূমির বুকেই তারা মমি তৈরির মাধ্যমে মৃতদেহ কবরস্থ করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করত। তবে এই কবর দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী, বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সাধারণের মাঝে পার্থক্য থাকতো। ধনী বা বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কবরের উপর শ্বেত পাথর গেঁথে পিরামিড তৈরি করে স্মৃতি সংরক্ষণ করা হতো।
মৃতদেহ সাধারণত কিছু দিন পর থেকে পচা-গলা শুরু হয়, আর সেজন্য এগুলো অবিকৃত অবস্থায় পিরামিডে বা সমাধিতে সংরক্ষণ করা ছিল তাদের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। সে সময় মৃতদেহগুলো পিরামিডে বা সমাধিতে অবিকৃত রাখতে মিশরীয়রা এক বিশেষ ধরনের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করতো। যাকে বলা হয় মমি সংরক্ষণ পদ্ধতি। প্রথম দিকে তারা যে পদ্ধতিতে মমি সংরক্ষণ করতো তাতে দেখা যেতো মৃতদেহ খুব বেশি দিন স্থায়ী হচ্ছে না। মমি তৈরির পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকার জন্য কিছু দিন পর নষ্ট হয়ে যেতো মৃতদেহ। যে কারণে সে সময় মিশরীয়রা চেষ্টা চালায় নতুন নতুন পদ্ধতির আবিষ্কার করতে। সেই হিসেবে তারা তাদের পুরনো অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মৃতদেহ দীর্ঘদিন অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত রাখার নতুন এক পদ্ধতির সূচনা করে। নতুন এক পদ্ধতি হিসেবে তারা মানুষের মৃত্যুর পর তার মৃতদেহ থেকে পচন ধরার আশংকা থাকে এরকম কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলে দিয়ে তা আলাদা করে রাখতো। এইসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে ছিল মস্তিষ্ক, পাকস্থলী, ফুসফুস, যকৃত ইত্যাদি। এরপর তারা কেটে নেয়া দেহের অংশগুলো ৪টি বিশেষ পাত্রে রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতো। কয়েক ঘণ্টা পরে ওই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আবার মৃতদেহে প্রতিস্থাপন করত। এরপর মৃতদেহে লবণ মাখিয়ে প্রখর রোদে রাখতো শুকানোর জন্য। এভাবে কয়েকদিন রোদে শুকানোর পর খুব সতর্কতার সাথে এমনভাবে মৃতদেহের পেটের কাটা অংশ সেলাই করা হত যাতে পেটের ভিতর কোনও প্রকার বাতাস ঢুকতে না পারে। এরপর এক গামলা পাইন গাছের আঠা মৃতদেহের গায়ে ঘষেমেজে ভালো করে লেপে দেয়া দিতো তারা। তারপর লিনেন কাপড়ের চওড়া ফিতে জড়িয়ে মৃতদেহটিকে বেশ পুরু করে ফেলতো তারা। তারা জানতো লিনেন কাপড় বায়ু নিরোধক। ফলে সহজে এটি ভেদ করে বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। আর তাই আপাদমস্তক কাপড় জড়ানোর পর একটি ঢাকনা যুক্ত কাঠের বাক্সে লিনেন কাপড়ে ঢেকে মমিটিকে রাখতো তারা। এরপর শুরু করতো সমাহিত করার কাজ। এভাবেই সমাহিত করা হতো মৃতদেহ।
কবরে কাঠের বাক্সসহ মৃতদেহ সমাহিত করা করতো মিশরীয়রা। মৃতদেহ বাক্সসহ কবরে শায়িত করার পর তার উপর মৃতব্যক্তির জীবিতকালে যেসব জিনিস প্রিয় ছিল সেসব কবরে দিয়ে দেয়া দিতো তারা। কারণ তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল মৃতব্যক্তির আত্মা পাখির আকৃতি ধারণ করে সারা দিন মনের সুখে এখানে-সেখানে উড়ে বেড়াতো। দিনের শেষে আত্মা আবার নিথর দেহে ফিরে আসতো। এমন সব উদ্ভট ধারণার জন্য জন্য থালা, বাটি থেকে শুরু করে আসবাবপত্রাদিও কবরে দরকার মনে করতো মিশরীয়রা। তাই জীবিত মানুষের কাছে যা কিছু অত্যাবশ্যকীয় এমন সবই কবরের মধ্যে মৃতব্যক্তির জন্য দিয়ে দিতো তারা। ধনী ব্যক্তিদের কবরে সাধ্যমতো সৌন্দর্যমণ্ডিত সমাধিসৌধ নির্মাণ করা করতো তখনকার মিশরীয়রা।
এসব সমাধিসৌধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল পিরামিড। পিরামিডের জন্য মৃতদেহটিকে কবর দেয়ার পর তার চারিধার দিয়ে শ্বেত পাথর গেঁথে বিশাল উঁচু সমাধি তৈরি করতো মিশরীয়রা। আবার কিছু কিছু মৃতদেহ সযত্নে পিরামিডের অভ্যন্তরে স্থাপন করে রাখতো তারা। এসব পিরামিড এখন শুধুই ইতিহাস -যা এখন বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য বিষয় হিসেবে পরিগণিত। সৌজন্যে: যুগান্তর অনলাইন।