নড়াইল প্রতিনিধি ॥ নড়াইলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ডিম ছাড়ার চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও নদনদীগুলো থেকে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ধরা হচ্ছে। বাজারে এসব ডিমওয়ালা মাছ প্রকাশ্যে বিক্রিও হচ্ছে। অথচ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নিয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি।
প্রকাশ থাকে যে, ডিমওয়ালা মাছ নিধনের এই আত্মঘাতী এ কাজটি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকায় জেলার নদনদীগুলো থেকে কমপক্ষে ৩০ প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যেই হারিয়ে গেছে। বাকি প্রজাতিগুলোও নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত নদনদী, খাল-বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যে ডিম ছাড়ে। ডিম ফুটে যেসব রেণু বের হয় পরবর্তীতে সেগুলো বড় হয়ে প্রকৃতিতে মাছের ভারসাম্য রক্ষা করে। অথচ কৌশলে এসব ডিমওয়ালা মাছ ধরা হচ্ছে। আর যেগুলো রক্ষা পাচ্ছে সেসব মাছের ডিম ফুটে বের হওয়া রেণুও নতুনভাবে আক্রমণের শিকার হয়। একশ্রেণীর অবৈধ রেণু সংগ্রহকারী এ সময় নদনদী, খাল-বিল থেকে রেণু পোনা সংগ্রহে নেমে পড়ে। রেণু পোনা সংগ্রহের জন্য পাতলা জাল, বেউচি জালসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, সংগৃহীত বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু থেকে শুধু কাঙ্ক্ষিত মাছের রেণু পোনা আলাদা করে বাকি প্রজাতিগুলোর রেণু পোনা অযত্নে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মৎস্যজীবীরা জানান, ১৫-১৬ বছর আগেও জেলার মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রা ও কাজলা নদীতে দেশী বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। অথচ বছরের পর বছর ধরে ডিমওয়ালা মাছ ধরা ও রেণু পোনা নষ্ট করার কারণে এসব নদনদী থেকে সরপুঁটি, ভেদা, পাবদা, বাউশ, কালবাউশ, ভেইশ, চামিন্দা, চাপিলাসহ কমপক্ষে ৩০ প্রজাতির মাছ ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে। এছাড়া নদীর পাংগাস, টেংরা, গোলশা, বেলে ইত্যাদি মাছও বিলুপ্তির পথে।
জেলার সর্বত্রই অবৈধ ডিমওয়ালা মাছ ও রেণু পোনা শিকারীদের তৎপরতা চোখে পড়লেও কালিয়া ও সদর উপজেলায় এদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। সদর উপজেলার কাজলা নদীতে আফরা থেকে তুলারামপুর পর্যন্ত ও চিত্রা নদীর গোবরা থেকে পেড়লী এবং কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর বড়দিয়া থেকে বারইপাড়া পর্যন্ত এলাকা থেকে ডিমওয়ালা মাছ ও রেণু পোনা সংগ্রহের মহোৎসব চলছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার অসাধু শিকারীরা প্রতিবছরই বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত এসব এলাকায় ভিড় জমায়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নড়াইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, একমাত্র ইলিশ ছাড়া অন্য কোন ডিমওয়ালা মাছ শিকারের ক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে ডিমওয়ালা মাছ শিকার অমানবিক।