দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতে কাঁপছে দেশ। তীব্র শীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দেশজুড়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ। যে কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিনে বিভিন্নস্থানে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে তীব্র শীতে শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র মানুষ বিপাকে পড়েছে। খবর সংবাদ মাধ্যমের।
গত ক’দিন ধরেই ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকা পড়েছে সূর্যের মুখ। দুপুর পেরিয়ে গেলেও সূর্যের দেখা মেলে না। প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। এ অবস্থায় শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত দিনের মধ্যে শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ঈশ্বরদী। ঈশ্বরদীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই দিন রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছরে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড।
শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বেশিরভাগ শিশু এবং বৃদ্ধরা। রংপুরে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল রবিবার পর্যন্ত ৫ দিনে মারা গেছে ১৭ শিশু।
ঈশ্বরদীতে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আবদুল বারী জানান, ঈশ্বরদীতে শীতের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে। অস্বাভাবিক এই শীতে কাবু হয়ে পড়েছে ঈশ্বরদীর সাধারণ মানুষ। দিনভর ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে স্থবির হয়ে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। শনিবার প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে এবং কোল্ডস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ঈশ্বরদীর বাঘইল গ্রামের বিলাত আলী নামে এক বৃদ্ধ মারা গেছে। এ ছাড়া শুক্রবার শীতে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধে রয়েছে আওতাপাড়া গ্রামের জহুরা বেগম ও সাঁড়া পদ্মা নদী পাড়ের সুপেরুন দাস। এরপূর্বে বৃহস্পতিবার রাতে হাজেরা খাতুন ও শুকুর আলী নামে দু’জনের মৃত্যু হয়। সব মিলে ঈশ্বরদীতে শীতে মৃতের সংখ্যা ৫ জন।
কুড়িগ্রামে শনিবার ভোরে হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে উলিপুর উপজেলার পাণ্ডুল ইউনিয়নের ফারাজীপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর নবজাতক শিশু মানু মিয়া মারা গেছে। উলিপুর টানা তিন দিনের শৈত্যপ্রবাহে জেলার উলিপুরে শীতজনিত রোগে ৩ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই শিশুরা হলো বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা গ্রামের নবীর উদ্দিনের মেয়ে নবীজন, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের চর কলাকাটা গ্রামের আক্কাছ বখশীর মেয়ে আদরী ও থেতরাই ইউনিয়নের রামনিয়াশা গ্রামের আছর উদ্দিনের মেয়ে জরিনা।
যশোরের কেশবপুর উপজেলায় তীব্র শীতে শুক্রবার ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। কোল্ডস্ট্রোকে ও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাতে উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের গুরুদয়াল দাস ও হাড়িয়াঘোপ গ্রামের তমিজ উদ্দিন সরদার মারা গেছেন।
অপরদিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে প্রচণ্ড শীতে শুক্রবার রাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলো উপজেলার সানকিভাঙা গ্রামের মো. নূরুল ইসলাম, গুয়াবাড়িয়া গ্রামের চেহারা বেগম, বারইখালি গ্রামের আরজজান বিবি ও আমেনা বেগম।
অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যেভাবে এবার শীতের প্রকোটতা বেড়েছে সে তুলনায় সাহায্য সহযোগিতা নেই বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই হয়তো এমন অবস্থা বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। রাজনৈতিক হানাহানি ভুলে শীতার্থদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো সকলের দায়িত্ব।