দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সময়, বার্ধক্য কখনো মানুষের নিয়ন্ত্রণে নেই,আর নেই বলেই হয়তো মানুষের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। যেমনটা ঘটেছে ৬০ এর দশকের পর্দা কাপানো চান্দা, তালাশ, কাচের দেয়াল, অরুণবরুণ কিরণমালা সহ বহুসফল সিনেমার নায়িকা রানী সরকারের ক্ষেত্রে, তার এই মুহূর্তে একটা টেবলেট (ঔষধ) কেনার মত অবস্থা নেই!
৬০ এর দশকের বাংলা চলচিত্রের প্রথম সারির নায়িকা রানী সরকার যার আসল নাম মোসাম্মৎ আমিরুন নেসা খানম। বাংলা চলচিত্রের বর্তমান এই অবস্থা কিন্তু এক দিনে গড়ে উঠেনি, আমাদের চলচিত্রের প্রথমিক ভিত্তি তৈরি হয়েছিল ৬০ এর দশকে, সে সময়ে কিছু মানুষের ঐকান্তিক চেস্টায় আমাদের চলচিত্রের আজকের এই পর্যায়। রানী সরকার যে সময়ে অভিনয়ে এসেছিলেন তখন বাংলায় নায়িকা পাওয়া অনেক দুস্কর ছিল সে সময়ে কেউই অভিনয় নিয়ে ভাবতেন না। রানী সরকার এসেছিলেন সমাজের বাঁধাকে ডিঙ্গিয়ে।
রানী সরকারের অভিনীত ছবি সমূহের মাঝে উল্লেখ করার মত অনেক ছবি আছে যেমন কাঁচের দেয়াল, চান্দা, আনোয়ারা কিংবা চোখের জল। অবশ্য রানী সরকারের বর্তমান অবস্থা তার ছবি চোখের জলের মতই বিষাদে পরিপূর্ণ।
রানী সরকার যে সময়ে অভিনয় করেছিলেন সে সময়ে বাংলা চলচিত্রে অভিনয় করেছিলেন সে সময়ে ছবির পারিশ্রমিক ছিল নাম মাত্র। আর রানী সরকার তার আয়ের সকল অর্থ নিজের মা, ভাই, বোন এবং কয়েকজন এতিমের জন্য খরচ করেগেছেন সারা জীবন। নিজের যুবতী বয়সে রানী সরকার সময় দিয়েগেছেন ছবি দুনিয়াতে, আয়ের অর্থ ব্যয় করেছেন পরিবারের জন্য, পছন্দের মানুষকে বিয়ে করেননি কেবল মা, ভাই এর কথা চিন্তা করেই। যদি বিয়ে করেন তবে মাকে ছেড়ে যেতে হবে, মাকে ছেড়ে গেলে কে দেখবে অসহায় মাকে? মায়ের কথা চিন্তা করেই রানী সরকার বিয়ে করলেন না।
মা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। এর পর নিজের বিয়ের বয়স পার হয়ে গেল এবং ভাইকে বিয়ে করালেন কিন্তু ভাইও মারা গেলেন দুই সন্তান এবং স্ত্রী রেখে। রানী সরকার এখন ভাইয়ের বউ, এবং ভাইয়ের দুই কন্যাকে সাথে নিয়েই থাকেন মোহাম্মদ পুর ৬ নম্বর রোডের শেষ মাথায় জরাজীর্ণ এক বাসায়।
রানী সরকারের অবস্থা এখন এতোটাই খারাপ যে প্রায় তার শরীরে ১০০ ডিগ্রী জ্বর থাকেই ওষুধ তো দুরের কথা অনেক সময় তিন বেলে খাবার জুটেনা। রানী সরকারের ভাষায়,” একটা টেবলেট কেনার মত অবস্থা আমার নেই। যা তোরা বাড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে দেখ। মাসের পরমাস আমি ভাড়া দিতে পারি না। আমার অবস্থা দেখার কেউ নেই।”
রানী সরকার আরও বলেন,”আমি তো কাজ করেই বেঁচে থাকতে চাই, আমাকে তো নতুন করে অভিনয় শিখতে হবেনা, অভিনয় আগে থেকেই আমার জানা। এখন কি কোন ছবিতে কোন বয়স্ক মানুশের চিরিত্রেও আমি অভিনয় করতে পারিনা? কেন কেউ আমার দিকে ফিরে তাকায় না?”
রানী সরকারের বর্তমান এই অবস্থা হবে তা হয়তো তিনি কখনোই ভাবেননি, হ্যাঁ যারা পরিবারের কথা ভেবে নিজের জীবন বিলিয়ে দেয়, অসহায় মায়ের কথা ভেবে নিজের সংসারের স্বপ্নকে বিদায় বলে দেন তাদের পরিণাম কি সত্যি এতো কঠিন হয়? আমরা কেন সামাজিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনা রানী সরকারদের জন্য? রানী সরকাররা যদি এভাবে ডুকরে কাঁদে তবে আমাদের সমাজে এক সময় আর কোন রানী সরকার আসবেনা। সমাজ চলে যাবে স্বার্থবাজদের দখলে। আমাদের সমাজের স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে রানী সরকারদের মনোবল।
রানী সরকারকে সাহায্য করতে যদি কেউ এগিয়ে আসতে চান তবে যোগাযোগ করুন নিচের ঠিকানায়ঃ
রাণী সরকার
মোবাইল-01739515181
বাসা-6,(নীচতলা)
ডাঃ হারুনের বাসা
নবোদয় হাউজিং মোড়, মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটির 6 নং রোডের শেষ মাথায়, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
সঞ্চয়ী হিসাব নং ৪৬০২, রাণী সরকার, রূপালী ব্যাংক লিঃ, মোহাম্মদপুর শাখা।