ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গত কয়েকদিনে সারাবিশ্বে মার্কিন বিরোধী যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানা বেধেছে তা প্রশমনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এক বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ইসলামবিরোধী যে প্রামাণ্য চিত্রটি নিয়ে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে হামলা-বিক্ষোভ হচ্ছে সেই ছবিটির সাথে দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পর্ক নেই। ছবিটি জঘন্য, নিন্দনীয় এবং একটি মহান ধর্মের প্রতি অবমাননা। নির্মাতা নিজ দায়িত্বেই এটি নির্মাণ ও প্রচার করেছেন। তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দোষারোপ কিংবা মার্কিন দূতাবাসের উপর হামলা কোনো কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ সমর্থন করতে পারে বলে ওয়াশিংটন মনে করে না। খবর রয়টার্সের।
সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের স্যাম বাসিল নামের একজন নবিশ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতার কাঁচা হাতে তৈরী ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামের একটি প্রামাণ্যচিত্রে মুসলমানদের নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) কে ব্যঙ্গ করায় ইসলাম ধর্মের অনুসারিদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন দেশে মার্কিন দূতাবাসে হামলা হয়েছে। নিহত হয়েছেন লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ইতিমধ্যে এই সহিংস বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ আরো ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনে হিলারি বৃহস্পতিবার ১৩ সেপ্টেম্বর পরিস্কার করে বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি ওই ভিডিওর সাথে মার্কিন সরকারের কোনো সম্পর্ক নেই। এই ভিডিওর দৃশ্যায়ন, বক্তব্য এবং বিষয়বস্তু আমরা সম্পূর্ণভাবে এবং সবটুকু প্রত্যাখ্যান করছি।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, ভিডিওটির বক্তব্য সম্পর্কে আমি যতটুকু শুনেছি তাতে আমি বলব এটি জঘন্য এবং নিন্দনীয়। এর পেছনের ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য নৈরাশ্যবাদ ছড়ানো, একটি মহান ধর্মের চরিত্রে কালিমা লেপন করা আর সহিংসতা উসকে দেয়া।’ সব ধর্মকে সম্মান করা যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্য বলে মন্তব্য করেন হিলারি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, কিছু মানুষের পক্ষে এটা বোঝা অসম্ভব যে, আজকের যুগে ইচ্ছা করলেই কেও দেখে ফেলার আগে যুক্তরাষ্ট্র একজন মানুষকে ইন্টারনেটে এজাতীয় জঘন্য ভিডিও পোস্ট করা থেকে নিবৃত করতে পারে না। ঘরে ঘরে ইন্টারনেটের এই প্রযুক্তির যুগে কে কি পোস্ট করছে তা নজরদারি করা একেবারেই অসম্ভব।
তিনি বলেন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তচিন্তার দেশ, বাক স্বাধীনতার দেশ। মার্কিন সংবিধান মানুষকে তার মনের ভাব মুক্তভাবে প্রকাশ করার অধিকার দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাক স্বাধীনতা কিংবা মত প্রকাশের ধরন কিংবা সীমা ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু মতপ্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় সহিংসতার পক্ষে কোনো যুক্তি যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করবে।
এদিকে এই ঘটনায় লিবিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিহত হওয়া ছাড়াও সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ ধরনের জঘণ্য ঘটনা যে ব্যক্তি ঘটিয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ওই প্রামাণ্য চিত্রটি নিষিদ্ধ করার দাবি করেছে।
বাংলাদেশের মুসলমানরাও এই জঘণ্য ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল শুক্রবার ১৪ সেপ্টেম্বর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। মিছিলকারীরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে ব্যঙ্গ করে নির্মিত প্রামাণ্য চিত্রটি নিষিদ্ধ ও নির্মাতাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।