দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে মুসা ইব্যাহীম বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ‘নেপাল পর্বত’ ভুল করেছে। প্রথম এভারেস্টজীয় বাংলাদেশী হিসেবেই তিনি তার নানা যুক্তি তুলে ধরেছেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে সারাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এভারেস্টজয় নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তিনি এভারেস্টের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে না উঠেই এমন দাবি করেছেনে বলে পত্র-পত্রিকার ব্যাপক আকারে চলে আসে। এমনকি তিনি নেপালের অপর পর্বত শৃঙ্গ লাং সিসা জয় না করেও সার্টিফিকেট নেওয়ার অভিযোগ! ওঠে তার বিরুদ্ধে। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্কের বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশী মুসা ইব্রাহীম। খবর বাংলাদেশ নিউজ ২৪ ডট কমের।
ওই বিবৃতিতে মুসা বলেছেন, “নেপাল পর্বত নামের প্রকাশনাটির ওই তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সেখানে এভারেস্টজয়ী প্রথম নারী পর্বতারোহী জুনকো তাবেইয়ের নাম নেই। ১৯৭৫ সালে এভারেস্ট জয় করেন জাপানের ওই পর্বতারোহী ৩৮তম এভারেস্টজয়ী।”
মুসা ইব্রাহীম আরও বলেন, “২০১০ সালের ২৩ মে বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় উড়েছিল। সেদিন তাঁর (মুসা ইব্রাহিম) সঙ্গে মন্টেনিগ্রোর ৩ পর্বতারোহী স্ল্যাগি, ব্লেকা ও জোকো তাঁদের দেশ থেকে প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছিলেন। ‘নেপাল পর্বত’ প্রকাশনায় নাম নেই তাঁদেরও। বাংলাদেশের এম এ মুহিত এভারেস্ট জয় করেন ২০১১ সালের ২১ মে । অথচ ‘নেপাল পর্বত’ স্মরণিকায় মুহিতের নামের পাশে লেখা রয়েছে ২০১২ সাল।” এ ধরনের আরও অনেক গুরুতর ভুল ওই প্রকাশনাটিতে রয়েছে বলে দাবি করেছেন মুসা ইব্রাহীম।
মুসা ইব্রাহিম প্রদত্ত বিবৃতিতে আরও বলেছেন, “এ বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২ এপ্রিল আমার সংগঠন ‘নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশ’র পক্ষ থেকে ওই স্মরণিকার প্রকাশক নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং এ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি আং শেরিং শেরপার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, চায়না-তিব্বতের দিক দিয়ে যারা এভারেস্ট জয় করেন, তাদের নাম নেপালের তালিকায় রাখা হয় না।”
মুসা ইব্রাহীম জানান, “নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং এ্যাসোসিয়েশন ওই প্রকাশনাটি বের করেছিল গত বছর। তালিকায় মুসা ইব্রাহীমের নাম না থাকায় তখনকার সভাপতি জিম্বা জাংবু শেরপার সঙ্গে মুসা যোগাযোগ করেন। তখন তিনি তাঁকে (মুসাকে) বলেন, ওই প্রকাশনায় অসাবধানতাবশত: কিছু ভুল হয়ে গেছে। তাঁরা খুব শিগগিরই এটি সংশোধনের উদ্যোগ নেবেন।”
নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং এ্যাসোসিয়েশন একটি এনজিও যা তাদের ওয়েব সাইটে (http://www.nepalmountaineering.org) বলা হয়েছে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আন্তর্জাতিক মানের একটি সংগঠন কেনো এমন ভুল করলেন। কি রহস্য রয়েছে এর পিছনে?
মুসা ইব্রাহীম বিবৃতিতে দাবি করেন, “২০১০ সালের ২৩ মে এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ানোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে ৬৭তম এভারেস্টজয়ী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পর থেকেই কিছু মানুষ এ অর্জনকে খাটো করার চেষ্টা করছেন। ২০১০ সালে একবার অনলাইনে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক-গবেষণা হয়। যাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করছিলেন, তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণের পর তাঁরাে আবার স্বীকার করতে বাধ্য হন, ‘মুসা ইব্রাহীম সত্যি সত্যি এভারেস্ট জয় করেছেন।”
মুসা ইব্রাহীম বলেন, “দীর্ঘ ৪ বছর পর আবারও একটি পক্ষ সন্দেহের আঙুল তুলেছেন। আমি বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করছি, তাঁরা শুধু সন্দেহই প্রকাশ করেছেন। কোনো তথ্যপ্রমাণ কিন্তু তারা হাজির করেননি।”
মুসা ইব্রাহীম জানান, ‘পাহাড়-চূড়ায় হাতছানি: কেওক্রাডং থেকে এভারেস্ট’ নামে প্রকাশিত তাঁর বইতে এভারেস্ট অভিযানের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এছাড়াও www.musaibrahim.com.bd নামের ওয়েবসাইটে তাঁর এভারেস্টসহ অন্যান্য অভিযানের সব ছবি ও তথ্যও রয়েছে বলে জানানো হয়। তবে ওই সাইটটি খোলা পাওয়া যায়নি।
এভারেস্টজয়ীদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয় যে সর্বজনস্বীকৃত আন্তর্জাতিক সাইটে, সেই (http://www.himalayandatabase.com/2010%20Season%20Lists/2010%20Spring%20A4.html) তালিকায় মুসার নাম রয়েছে।
অভিযোগকারীদের উদ্দেশে মুসা ইব্রাহিম চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, “আপনাদের হাতে যদি কোনো তথ্যপ্রমাণ থাকে যে, ২০১০ সালের ২৩ মে বাংলাদেশের পতাকা এভারেস্টের চূড়ায় ওড়েনি, তাহলে সেই প্রমাণ জাতির সামনে প্রকাশ করুন।”