দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হংকং এর কোওলুন ওয়াল সিটিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে একে অপরের উপর গড়ে উঠা একটি ঘরই একটি প্রকাণ্ড সাম্রাজ্য। একটি ঘর আরেকটি ঘরের সাথে সিঁড়ি দ্বারা সংযুক্ত। কথিত রয়েছে এর অন্ধকার ঘনবসতিপূর্ণ জায়গাটি হংকং পুলিশেরাও ভয় পায়।
প্রায় ৩৩,০০০ মানুষ বসবাস করতো এই বাড়িতে কিংবা শহরে। ফটোগ্রাফার গ্রেগ জিরার্ড এখানে কিছুদিন থেকেছিলেন এবং এই শহরকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন। তিনি যখন প্রথমবার এটি দেখেছিলেন তখন অবাক হয়ে গিয়েছেন। তার নিজের ভাষায় এটি দেখতে প্রকাণ্ড আকৃতির কিম্ভূতকিমাকার একটি দালান। সর্বোপরি ওয়াল সিটি ছিল একটি ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। এটি ছিল সাবেক চিং রাজবংশের দুর্গ। পরবর্তীতে ব্রিটিশ উপনৈবেশিককালেও ব্রিটিশ সরকার একে পুরোপুরি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। ফলে এখানের অধিবাসীরা নিরাপত্তা কোড উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো দালান নির্মাণ করে।
এভাবেই একটির গায়ে একটি লেগে গিয়ে তৈরি হয় বিশালাকার সাম্রাজ্য। শেষ পর্যন্ত অবস্থাটি এমন দাড়ায় যে একটি দালানের সিঁড়ি আরেকটি দালানের সিঁড়ির সাথে সংযুক্ত হয়ে যায়। দেখে মনে হয় সবগুলো মিলে একটাই দালান যার অনেকগুলো শাখাপ্রশাখা জন্মেছে। এখানের পরিবেশ পুরোপুরিই অস্বাস্থ্যকর। এখানে বায়ু চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, নেই এখানকার শিশুদের খেলার ব্যবস্থা। ফলে দালানের ভেতর বিরাজ করে বস্তির পরিবেশ। দালানের গভীর এলাকায় অবস্থা আরো করুণ সেখানে পর্যাপ্ত আলো না থাকার কারণে সবসময়ই অন্ধকার বিরাজ করে। দেখে যে কারো মনে হবে মৃত্যুপুরী।
এর ভেতরই একজন মানুষের জীবন চলার জন্য যা যা প্রয়োজন সব পাওয়া যায়। ভেতরে রয়েছে অসংখ্য দোকান তবে সবচেয়ে বেশি মাংসের দোকান। এর ভেতর কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় না। কারণ কোন স্বাস্থ্য পরিদর্শক এখানে পরিদর্শনে আসেনি। ফটোগ্রাফার জিরার্ডের মতে এখানের পরিবেশে একধরনের বন্যতা রয়েছে।
কোওলুন শহরের জটিলতা নিয়ে গবেষণা করেছেন হংকং আর্কিটেকচার রিসার্চ সেন্টারের গবেষক অ্যারন তান। তিনি যখন গ্র্যাজুয়েট স্কুলের ছাত্র ছিলেন তখন এই অঞ্চলটি নিয়ে গবেষণা করেন। “এটি সত্যি এক অসাধারণ শহর আমার কাছে মনে হয় এটি একটি মেশিন যা অনেকটা সময় ধরে ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে।” অ্যারন তান কোওলুন শহরের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন। তিনি আরো জানান এর জল ব্যবস্থাপনাটি বেশি আকর্ষণীয় কারণ এতগুলো মানুষের জলের ব্যবস্থা করা খুব সহজ কাজ নয়। স্থানীয় অধিবাসীরা জলের সংস্থানের জন্য নিজেরা কূপ খনন করেছে তার পাশাপাশি সেই জলের সরবরাহের ব্যবস্থাটিও বেশ চমৎকারভাবে করেছে। ফলে এখানকার অধিবাসীদের পানির কষ্টে পড়তে হচ্ছে না।
১৯৯৪ সালে সিটি সরকার শহরটি নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেয় এবং এর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে একে ভেঙ্গে ফেলে। বর্তমানে একে পাবলিক পার্কে পরিণত করার ব্যবস্থা করা হয়। দর্শনার্থিরা একে এখন দেখতে আসলে দেখবে প্রাচীর ঘেরা এক অসাধারণ বাগান। অন্ধকারছন্ন কিছু পুকুর আর দেয়াল বেয়ে উঠা লতানো গাছের এক অন্যরকম স্থান। এখানে ক্রিস্টোফার নোলানের বিখ্যাত মুভি “ব্যাটম্যান বিগেন” শুটিং করা হয়। গেমিং জগতে সাড়া ফেলে দেওয়া “কল অব ডিউটিঃ ব্ল্যাক অপ্স” এর পটভূমি এই কোওলুন শহরকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয়।
স্লাইডশোতে আরো দেখুন
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন