দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৮৬৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন করেন।
প্রকল্পটির নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য এনজিএন ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন। চীন সরকার এই প্রকল্পের সাহায্য হিসেবে ১৪৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রদান করবে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৪০৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট যোগাযোগ স্থাপন করা। প্রকল্পটির পরিপত্রে বলা হয় এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেওয়া হবে। গ্রামের সেই ইন্টারনেট সংযোগের সাথে জাতীয় পর্যায়ের সকল প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত করা হবে। ফলে পুরো বাংলাদেশকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা সম্ভব হবে। প্রকল্পটি এই বছরের জুন থেকে শুরু করে শেষ হবে ২০১৭ সালের জুন মাসে। গ্রামাঞ্চলের সকল সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে সাশ্রয়ীমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হবে। গ্রামে কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে ইন্টারনেট টেলিফোন, ভিডিও কনফারেন্সের ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকায় এবং চট্টগ্রামে একটি করে ইন্টারনেট প্রটোকল সাবসিস্টেম বা আইএসএএস প্লাটফর্ম স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের মূল পরিপত্রে আরো বলা হয় দেশে যে সকল বেসরকারি মোবাইল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা মূলত ভয়েস কল সার্ভিসটি দিয়ে থাকেন। ইন্টারনেট সার্ভিস দিলেও তা মূলত বেশ ব্যয়বহুল। এই প্রকল্পের আওতায় বিটিসিএল বিদ্যমান নেটওয়ার্কের আধুনিকায়ন করে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিবে। প্রকল্পের পরিপত্রে আরো বলা হয় এর ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে ভয়েস কল এবং ইন্টারনেট সেবা দেশের সকল স্থানের মানুষের কাছে পৌছে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি সুষম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে।
একনেকের গত সোমবারের সভায় এই প্রকল্পটি ছাড়াও আরো ৪টি প্রকল্প পাস হয়। এই পাঁচটি প্রকল্পের মধ্যে চারটি প্রকল্প নতুন আর অপরটি সংশোধিত প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বিটিসিএলকে বর্তমান এক্সচেঞ্জগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে। বর্তমান এক্সচেঞ্জগুলো দ্বারা বিটিসিএল এখন শুধুমাত্র ভয়েস কল সার্ভিসটি দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই প্রকল্পের অংশ অনুসারে বিটিসিএলকে বিদ্যমান এক্সচেঞ্জগুলোতে স্থাপন করতে হবে মাল্টিমিডিয়া বেইজড ট্রান্সমিশন যন্ত্রপাতি। এজন্য বিটিসিএল এক্সচেঞ্জগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কপার বেইজড টেলিফোন নেটওয়ার্কের বদলে বসানো হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক।
জনগণের দোরগোড়ায় সাশ্রয়ী মূল্যে আইসিটি সেবা পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে দেশে টেলিডেন্সিটি বৃদ্ধি এবং টেলিএক্সেস সুবিধা সম্প্রসারিত হবে। এছাড়াও এই সভায় ঢাকা আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতালের জন্য একশকোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বেসরকারি উদ্যোগে ঢাকার আহছানিয়া মিশন আশুলিয়ায় একটি ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণ করছে। এই ক্যান্সার হাসপাতালটির নির্মাণ ব্যয় চালানোর জন্য জনসাধারণের উন্মুক্ত অনুদান গ্রহণ করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার এর প্রতি নজর দিচ্ছে, সেই লক্ষ্যে সরকার এর যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য টাকা বরাদ্দ করে। ঢাকার আহছানিয়া ক্যান্সার হাসপাতালের মাধ্যমে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধের উপায় নিয়ে গবেষণা এবং দুস্থ রোগীদের সাশ্রয়ীমূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য পরিদপ্তরের বরাত দিয়ে জানা যায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ডাটাবেইজ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে থাকা ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি অনলাইন যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এতে করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা চিকিৎসকরা ক্যান্সার গবেষণা কিংবা চিকিৎসার বিষয়ে তাৎক্ষনিকভাবে অবহিত থাকবেন।