দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আকাশে উড়া ছাড়া চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করাটা অনেকের কাছেই হাস্যকর শোনাতে পারে। কিন্তু বেইজিং বিশ্বাস করে ভবিষ্যতে তারা এই ভ্রমণটি সম্ভব করতে পারবে।
চীনের দি বেইজিং টাইমসের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আরও জানানো হয় যে, চীন একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিচ্ছে যেখানে তারা একটি বিশেষ ধরনের অতি উচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন এবং ট্রেনলাইনের কথা চিন্তা করছে যা চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৮ স্টেটসকে সংযোগ স্থাপন করাবে। প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বর্তমানে চীন তাদের উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগের ক্ষেত্রে এই রুটের কথা বিবেচনা করছে। দি বেইজিং টাইমসের বরাত দিয়ে আরও বলা হয় যে, এই রুটটি যাবে রাশিয়ার সাইবেরিয়ার উপর দিয়ে বেরিং প্রণালী হয়ে আলাস্কা তারপর সেখান থেকে কানাডার উপর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে। ফলে চীনের মহাপরিকল্পনার এই ট্রেনলাইন রুটটি একই সাথে চারটি দেশের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেরিং প্রণালী অতিক্রম করার জন্য এখানে স্থাপন করা হবে ভূগর্ভস্থ টানেল।
এই রুটটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো সাইবেরিয়া এবং আলাস্কাকে সংযোগ স্থাপন করা বেরিং প্রণালী। এই বেরিং প্রণালী অতিক্রম করতে এই পরিকল্পিত ট্রেনলাইনের জন্য প্রয়োজন ভুগর্ভস্থ টানেল। এই নির্মাণের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অংশটিও টানেল নির্মাণ। এই টানেলটি হবে প্রায় ২০০ কিলোমিটার বা ১২৫ মাইল লম্বা। এর দৈর্ঘ্যই প্রকৌশলীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কেননা এটি ইংলিশ চ্যানেল থেকে প্রায় ৪ গুণ বেশি লম্বা। ইংলিশ চ্যানেল হলো যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি টানেল। যা ভূমধ্যসাগরের ইংলিশ প্রণালীর ভুগর্ভস্থ টানেল। কিন্তু চীনের এই পত্রিকাটির দাবি, চীন তাদের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই টানেলটি নির্মাণ করতে সক্ষম। তারা আরো দাবি করছে, ইতোমধ্যে এই টানেলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে, এই ট্রেন রুটের মোট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৩০০০ কিলোমিটার বা ৮১০০ মাইল। যা ট্র্যান্সসাইবেরিয়ান রেলওয়েরও দ্বিগুণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রেনের গতি যদি ঘন্টায় ২২০ কিলোমিটার করে হয় তবে এই রেলপথটি অতিক্রম করতে সময় লাগবে অন্তত দুইদিন। দি গার্ডিয়ান সূত্রে আরো জানা যায় যে, বর্তমানে এই পরিকল্পনাটি চীন-রাশিয়া-কানাডা-আমেরিকা রেললাইন হিসেবে নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
চীনের অ্যাকাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিং সূত্রে আরো জানা যায় যে, রাশিয়া অনেক বছর যাবত এই ধরনের একটি মহাপরিকল্পনার কথা চিন্তা করছে। এই পুরো পরিকল্পনার একটি সিংহভাগ অর্থ বহন করবে চীন সরকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহগ্রস্ত কেননা চীনের দাবি অনুযায়ী এই পরিকল্পনার একটি বড় অংশের কাজ শুরু হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া কিংবা যুক্তরাষ্ট্র এই পরিকল্পনা নিয়ে এখনো কোন ধরনের বিবৃতি প্রদান করেনি। চীনের এই রেল পরিকল্পনাটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সাথেই বাস্তবায়নেই শেষ নয়। চীন আরো তিনটি দীর্ঘতম লাইনের পরিকল্পনা করছে। তার মধ্যে রয়েছে চীন থেকে যুক্তরাজ্য বিস্তৃত, চীন থেকে মধ্যপ্রাচ্য বিস্তৃত এবং চীন থেকে সিঙ্গাপুর বিস্তৃত। চীনের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে মহাদেশীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো বিস্তৃত হবে বলে করা যায়।
উল্লেখ্য যে, ট্র্যান্সসাইবেরিয়ান রেলপথটি বর্তমান কাল পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘতম রেলযোগাযোগ ব্যবস্থা। যা রাশিয়া মস্কো থেকে সাইবেরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত। এই রেলপথ রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলকে পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সংযোগ স্থাপন করিয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ আরটি