দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাতছড়ির পাহাড়ে ৭ বাংকার ও কূপের গোলাবারুদগুলো ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ হিসেবে জানা যায়, চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্রের সঙ্গে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মিল রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ভেতরে পাহাড়ে কূপ খুঁড়ে এবং বাংকার থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ও গোলাবারুদগুলো চীনের তৈরি। র্যাবের গোয়েন্দা দলের সদস্যরা মনে করছেন, এগুলো ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ ‘অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স’ যাকে বলা হয় এটিটিএফ বা ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা্’র (এনএলএফটি) সদস্যদের হওয়ার সম্ভাবনা।
জানা যায়, ২০০৩ সালে বগুড়ার কাহালুতে গোলাবারুদসহ ট্রাক ধরা পড়ে। সে সময় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ব্যাপক অভিযান চালিয়েছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাৎক্ষণিক ওই অভিযানের মুখে নিজেদের সংগ্রহে থাকা অন্যান্য অস্ত্র এবং গোলাবারুদ তখন সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হয় ওই গ্রুপগুলো। হয়তো তাদেরই কোন একটি গ্রুপ পাহাড়ে কূপ এবং বাংকার বানিয়ে এগুলো সংরক্ষণ করে। সেইসব অস্ত্রই ১০ বা ১২ বছর পর উদ্ধার করা হলো। তবে এই অভিযানের সময় র্যাবের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, সংগ্রহে থাকা বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা তখন অনেক সস্তায় পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কাছে বিক্রিও করে দেয়। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা দেখেছেন, উদ্ধার করা এসব অস্ত্র-গোলাবারুদের সঙ্গে নাকি চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র এবং বগুড়ার কাহালুতে ২০০৩ সালে উদ্ধার করা গোলাবারুদের সাদৃশ্য রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অত্র এলাকায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা নেই বলে মনে করা হচ্ছে। আবার র্যাব-পুলিশের তৎপরতায় এই মুহূর্তে সুড়ঙ্গ করে বাংকার বানানোর সুযোগও কম বলে মনে করা হচ্ছে।
র্যাবের অভিযানে বের হয়েছে ৩টি বাংকার এবং ৪টি কূপ। এরমধ্যে একটি পাহাড়ের উপর ৩টি কূপ এবং একটি কংক্রিটের বাংকার। অপর একটি পাহাড়ে ১টি কূপ এবং পাশের ‘টিপরা’ বস্তিতে পাওয়া যায় ২টি ঘরের নিচে ২টি কংক্রিটের বাংকার। উদ্ধার করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদের সবই মিলেছে ওই ২টি কূপ থেকেই। ওখানকার বাংকার থেকে কিছুই পাওয়া যায়নি।
উদ্ধার করা গোলাবারুদের মধ্যে গতকাল বুধবার পাওয়া গেছে:
১টি রকেট লঞ্চার
৪০ মিলিমিটার উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৮টি রকেট
৯৫টি রকেটের চার্জার,
৪টি মেশিনগান
৫টি মেশিনগানের ব্যারেল
ছোট-বড় অস্ত্রের আড়াই হাজার গুলি
২টি গুলির বেল্ট
আগ্নেয়াস্ত্র পরিষ্কার করার ল্যান্সিড ওয়েলের ৪৬টি কৌটা
আগের দিন মঙ্গলবার পাওয়া যায়:
১৮৪টি রকেট
৫৩টি রকেটের চার্জার
উল্লেখ্য, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্ণেল জিয়াউল আহসান সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সাতছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় তল্লাশি শুরু করে র্যাব সদস্যরা। তবে এই বিশাল পাহাড়ের মধ্যে কোথায় কিভাবে অভিযান চালানো হবে- তা নিয়ে যথেষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হয় র্যাবকে। এমন এক পরিস্থিতিতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘ডগ স্কোয়ার্ডে’র তিনটি কুকুর নিয়ে এসে এই উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরই কূপ এবং বাংকারগুলোর সন্ধান দিতে সমর্থ হয়।