দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥মৃত্যু মানুষের একটি আমোগ পরিণতি। সবাইকেই কোন না কোন সময় এটি গ্রহণ করতেই হবে। স্বাভাবিক বার্ধক্যজনিত মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় কিন্তু অস্বাভাবিক কিংবা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। চলুন জেনে নেওয়া যাক মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায় এমন কিছু অভ্যাসের কথা যা এখনই ত্যাগ করা উচিত।
অতিরিক্ত কফি পান
কফি পান করার কিছু উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে কফি পান করা আপনার বহু স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি করে। আর এসবের ফলে অনেকেই তাড়াতাড়ি মৃত্যুমুখে পতিত হয়। সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, ৫৫ বছর বয়সের নিচের যারা দিনে চার বা তার চেয়ে বেশি কাপ কফি পান করে কিংবা সপ্তাহে ২৮ কাপের বেশি কফি পান করে তাদের ক্ষেত্রে বিপদের পরিমাণটা অনেক বেশি। পরিসংখ্যানে প্রকাশিত হয়েছে, এ ধরনের ব্যক্তিদের অকালমৃত্যুর হার ৫৬ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, কফিতে রক্তচাপ বেড়ে যায়। এছাড়া এপিনেফরিন উৎপাদন বেড়ে যাওয়া এবং ইনসুলিনের কার্যক্রম থেমে যাওয়ায় এ ধরনের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঘুমের ওষুধ খাওয়া
বহু মানুষেরই অনিদ্রার মতো সমস্যা হয়। আর এ সমস্যার সমাধানে তারা বেছে নেন ঘুমের ওষুধ। আর ঘুমের ওষুধের সঙ্গে পাওয়া গেছে তাড়াতাড়ি মৃত্যুর একটি সম্পর্ক। দেখা গেছে, যারা ঘুমের ওষুধ সেবন করেন তাদের স্বাভাবিক সময়ের আগে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা পাঁচ গুণ বেশি। আর এ ওষুধের ডোজ যদি অতি সামান্যও হয়, তার পরেও মৃত্যুর সম্ভাবনা বাদ যায় না। এর হার হতে পারে বছরে ৪ থেকে ৪৮টি পিল তাহলেও ঝুঁকি কমে না। আর এ ঝুঁকি তাদের ৩.৬ গুণ বেশি।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
আপনার যদি ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া অভ্যাস থাকে তাহলে দ্রুত তা বন্ধ করুন। এগুলোর ভেতরে ফ্যাট ছাড়াও থাকে অতিরিক্ত সোডিয়াম। টেক্সাস মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে দিয়েছে যে, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খেলে আপনার মৃত্যু হতে পারে। অতিরিক্ত লবণের কারণে কিডনির পাথর ও হাইপারটেনশন হতে পারে। আর হাইপারটেনশনের কারণে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। যারা হাইপারটেনশনে ভোগেন তাদের প্রতিদিন ১,৫০০ মিলিগ্রামের চেয়ে কম লবণ গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু ফার্স্ট ফুড খেলে আপনার এ মাত্রা কোনোভাবেই বজায় রাখা সম্ভব হবে না। কেননা ম্যাকডোনাল্ডসের একটি বার্গারেই অনেক সময় ১১০০ মিলিগ্রাম লবণ থাকে। ফলে অন্যান্য খাবারের লবণ গ্রহণ করার পর এ মাত্রা অনেকখানি বেড়ে যায়।
একাকিত্ব
যেসব মানুষ একাকী বাস করেন, তারা অন্যদের তুলনায় তাড়াতাড়ি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তবে এ বিষয়টি ৫২ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। ব্রিটিশ একটি গবেষণায় সাড়ে ছয় হাজার ব্যক্তির ওপর সমীক্ষা করে এ ফলাফল পাওয়া যায়। বয়স্ক একাকী ব্যক্তিরা অন্যদের তুলনায় বেশি মানসিক সমস্যা ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
অতিরিক্ত বসে থাকা
আপনার যদি অতিরিক্ত চেয়ারে বসে থাকা অভ্যাস থাকে তাহলে তা অকাল মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ইউনিভার্সিটি অফ লেইসেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকলে বহু শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এটি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়ায়। অস্ট্রেলিয়ান এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ১১ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় চেয়ারে বসে কাটায়, তাদের অকালে মৃত্যুর গড় হার ৪০ ভাগ বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ
কর্মক্ষেত্রে যদি অতিরিক্ত চাপ থাকে তাহলে তা মৃত্যুর কারণ হয়। লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চাপযুক্ত চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের স্বাভাবিকের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৩ ভাগ বেড়ে যায়। এছাড়া যারা দিনে ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করে তাদের বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর এভাবেই বেড়ে যায় মৃত্যুর সম্ভাবনা।
যৌন শিথিলতা
উপযুক্ত যৌনতা না করার কারণেও মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। অন্যদিকে যারা নিয়মিত যৌনতা করে, তাদের জীবনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত যৌনতা মানুষের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, রক্তচাপ কমায় ও কোলেস্টেরল মাত্রা ঠিক রাখে। এ ছাড়াও যৌনতা মানুষের ওজন কম রাখতে সহায়তা করে। ডিউক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী নিয়মিত যৌনতা করে, তাদের জীবনে গড়ে আট বছর যোগ হয়। আর যারা নিয়মিত যৌনতা করে না, তাদের অকালমৃত্যুর হার ৫০ ভাগ বেড়ে যায়।