দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারত আর বাংলাদেশ পাশাপাশি দুটি দেশ। আর এই দেশ দুটির বিভাজন হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন সীমান্ত এলাকায় একটি গ্রাম পড়েছে দুই দেশের সীমানার মধ্যে!
গ্রামের নাম দৌলতপুর। ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের ৪৩ নম্বর পিলার ঘেঁষা এ গ্রামটি। এ গ্রামে দু’দেশের প্রায় ৫শ’ মানুষ বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরেই তারা একই মসজিদ ও ঈদগাহে নামাজ আদায় করে আসছেন। অনেকে আবার আত্মীয়তার বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েছেন। ১৯৪৭ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দেশ ভাগের পর থেকেই এই গ্রামের মানুষগুলো পাশাপাশি, একই বাঁধনে জড়িয়ে আছেন। যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের অন্তরগত গ্রাম হলো এই দৌলতপুর।
ভারতের কাঁটাতারের বাইরে বাস, যে কারণে ওই এলাকার কিছু মানুষ রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাছাড়া তেমন কোনো সমস্যা নেই তাদের। এদিক থেকে এগিয়ে আছেন ওই গ্রামের বাংলাদেশের নাগরিকরা।
জানা গেছে, সীমান্তবর্তী ওই দৌলতপুর গ্রামে ভারতীয় অংশে ১৮টি পরিবারের মোট ৭১ জন মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে আবার ৩৬ জন ভারতীয় ভোটার। অপরদিকে বাংলাদেশের অংশে প্রায় ১শ’ পরিবারের ৩ শতাধিক মানুষের বসবাস। বাংলাদেশের এই অংশে ১৯৪৭ সালে একটি মসজিদ ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই এলাকায় ১৯৯৭ সালে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়। বর্তমান সরকারের আমলেই পাকা রাস্তা হয়। অর্থাৎ আধুনিক প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিকরা।
অপরদিকে ভারতীয় ভূখণ্ডের মানুষ সেদেশের অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। যদিও বাস্তবে কোনো সমস্যা নেই। দু’দেশের মানুষগুলো মিলেমিশে ভাগেযোগে সব কিছুই নিজেদের মতোই ব্যবহার করছেন।
দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় বেশ কয়েক বছর আগে ইন্ডিয়াপাড়ার ছেলে-মেয়েরা এই স্কুলে আসতো। একই গ্রাম হওয়ায় তারা এখানে ভর্তিও হতো। কিন্তু এখন আর কেও এই স্কুলে পড়ে না।
ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, বিএসএফ ক্যাম্পে কার্ড জমা দিয়ে তাদের ভারতে যেতে হয়। যাদের কার্ড তাদের নাম অঞ্চল প্রধানের কাছ থেকে লিখে আনতে হয়। ভোটের সময় ভোট চাইতে আসে। কিন্তু ভোট চলে গেলে আর কেও কোনদিন খোঁজও নেয় না। ওই এলাকার এক ভারতীয় জানান, অনেকবার শুনেছি আমাদের জন্য রাস্তা হবে, বিদ্যুৎ আসবে। কিন্তু কই, হচ্ছে না।
১১নং সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোতা মিয়া সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, বাংলাদেশের দৌলতপুর গ্রামের বহু উন্নয়ন হয়েছে। যেটুকু হয়নি সেগুলো বিএসএফের বাধার কারণে রাস্তা পাকা করা যাচ্ছে না। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মেইন পিলার হতে ২০০ গজ দূরে রাস্তা পাকা করতে হবে। বাংলাদেশের রাস্তাটি সীমান্ত পিলারের গা ঘেঁষে অবস্থিত হওয়ায তারাও তাদের নাগরিকদের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ এবং রাস্তা দিতে পারছে না। মোট কথা আন্তর্জাতিক আইনের মারপ্যাসে নাগরিকরা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।